প্রশ্নবিদ্ধ নারী সাংবাদিকতা!
পৃথিবীতে যতগুলো চ্যালেঞ্জিং পেশা রয়েছে নিঃসন্দেহে তার মধ্যে অন্যতম একটি হল সাংবাদিকতা। আর একজন নারী যখন এই পেশা বেছে নেন সেই চ্যালেঞ্জ যেন আরো হাজার গুন বেড়ে যায়। যদিও পেশার কোন লিঙ্গ নেই তবে একজন নারী সাংবাদিকের দিকে সমাজের বাঁকা চোখে চাহুনী এ বৈষম্য প্রকটভাবে দেখিয়ে দেয়। শুধু সাংবাদিকতাই নয় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অবস্থান মেনে নিতে আমাদের সমাজ এখনো নারাজ।
সেই শুরু থেকেই যদি বলি, দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো শিক্ষার্থীকে 'Aim in life' প্যারাগ্রাফ লিখতে বলা হলে সেখানে হাতেগোনা দু'চারটা পেশাই ঘুরপাক খাবে। আর তার ধারেকাছেও যে সাংবাদিকতা পেশাটি থাকবেনা তা নিশ্চয়ই আচ করতে পারছেন। যদিও তর্কে খাতিরে ধরেও নেই কারো কারো পছন্দের পেশা সাংবাদিকতা হবে, তবে সে তালিকায় মেয়েদের সংখ্যা যে হবে খুবই নগণ্য তা আর বলার উপায় রাখেনা।
কিন্তু এ দায় কার? শুরু থেকেই নারীকে শেখানো হয় সে দুর্বল, তার অবস্থান চার দেয়ালের মধ্যে। বাইরের জটিল পৃথিবীর হিসেবনিকেশ নারীর জন্য নয়। একটা সময় নারীর পড়ালেখা, বাইরে বেরিয়ে অর্থ উপার্জন করা ছিল মহা অন্যায়। ধীরে ধীরে সে পরিস্থিতি অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে আমাদের সমাজ। নারীর পড়ালেখা এবং চাকরিতে অংশগ্রহণ অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জিং পেশাগুলোতে নারীর সংখ্যা আজও অতি সামান্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার শুরুর দিকে কারো সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র বিশেষ একটি প্রশ্ন, 'কোন বিষয়ে পড়াশোনা করছো?' উত্তরটা যখন হয় 'সাংবাদিকতা', মুহূর্তেই চোখমুখ পাল্টে ছুড়ে দেয়া হয় আরো একটি প্রশ্ন, ' এতকিছু থাকতে মেয়ে মানুষ হয়ে সাংবাদিকতা?' এখান থেকেই শুরু। এরপর প্রতিটি ধাপে ধাপে চোখে আঙুল দিয়ে সমাজ দেখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে সাংবাদিকতা নারীর জন্য নয়।
সমাজকে এ কাজে সহায়তার জন্য তৈরি হয় মন্ত্রণালয়ে নারী সাংবাদিককে হেনস্তার মতো নিন্দনীয় ঘটনা। যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরির জন্য একজন নারী সাংবাদিককে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হয় এবং সর্বশেষ নামেমাত্র মামলা দায়ের করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়৷ আর এ ঘটনার পরপরই প্রতিটা নারী সাংবাদিকের দিকে সমাজ কর্তৃক ছোড়া হয় একাধিক প্রশ্ন, 'দেখেছো মেয়ে হয়ে সাংবাদিকতা করার ফল?'
পরিবার ও সমাজের শত বাঁধা উপেক্ষা করে সাংবাদিকতা পেশায় আসেন কতিপয় সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী নারীরা। আর পাঁচটি সাধারণ পেশার মতো নয় এ পেশা। রাত-বিরাতে সংবাদের পেছনে ছোটা, যখন তখন অফিসে যাওয়া নারীদের জন্য অনেকটা অসম্ভবই বটে। কিন্তু নিজেদের আত্মবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে তা সম্ভব করেন নারী সাংবাদিকরা।
কিন্তু দিনশেষে সচিবালয়ের মতো জায়গায় একজন নারী সাংবাদিককে নির্যাতন, হেনস্তার ঘটনা সমাজকে সকল নারী সাংবাদিককে নিরুৎসাহিত করার এক চাবিকাঠি দিয়ে দেয়। প্রিজন ভ্যানে সাংবাদিক রোজিনার মলিন চেহারার দৃশ্য প্রশ্নবিদ্ধ করে সাংবাদিকতাকে, প্রশ্নবিদ্ধ করে নারী সাংবাদিকতাকে।