Skip to content

শারীরিক গড়নের জন্য বাদ পড়া, সেই মডেলই গড়লেন নতুন বিশ্ব রেকর্ড

 ফ্যাশনবোদ্ধাদের নেতিবাচক মন্তব্যের মধ্যে প্রচলিত ছিল মডেল হতে হলে দেখতে সুন্দর হতে হবে, লম্বা হতে হবে, নিখুঁত হতে হবে—এমন একটা ধারণাই সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

নাইজেরিয়ান মডেল ওলোলাদে আয়েলাবোলার মডেলিং জীবনের শুরুর দিককার গল্পটাও এমনই ছিল। লাগোস ফ্যাশন উইকের অডিশনে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও কেবল কম উচ্চতার জন্য বাদ পড়তে হয়েছিল তাঁকে। মন ভেঙে গিয়েছিল। লাগোসে গেল অক্টোবরে সেই ওলোলাদেই ক্যাটওয়াকের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। শারীরিক গড়ন কিংবা রোগের জন্য আদতে কেউ ‘অযোগ্য’ হয়ে যান না, এই বার্তা ছড়িয়ে দিতেই তিনি ব্যতিক্রমী সেই ক্যাটওয়াকের আয়োজন করেছিলেন।

ওলোলাদে আয়েলাবোলা ছয় বছর ধরে পেশাদার মডেলিং জগতে কাজ করছেন। তবে লাগোসের সেই ঘটনা ভোলেননি তিনি। তাই তো এমন এক আয়োজনের কথা ভেবেছেন, যেখানে বহু ধরনের মডেল যোগ দিতে পারবেন, তুলে ধরতে পারবেন নিজের প্রতিভা। আর তা দেখে অনুপ্রাণিত হবেন অন্যরাও, কৃত্রিম সৌন্দর্যের পিছে না ছুটে নিজস্বতার ছাপ রাখবেন কাজের জগতে, ছুটবেন নিজের স্বপ্নের পেছনে।

রেকর্ড ভাঙার গল্পটা

ক্যাটওয়াকে একজন মডেলের সবচেয়ে বেশি দূরত্ব হাঁটার রেকর্ডটা এখন ওলোলাদে আয়েলাবোলার দখলে। অক্টোবরের সেই আয়োজনে ১২৫ দশমিক ১১ কিলোমিটার হেঁটেছেন ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী। সময় লেগেছে পাঁচ দিন। গোটা পৃথিবীতে তাঁর চেয়ে বেশি দূরত্ব কেউ হাঁটেননি কোনো ক্যাটওয়াকেই। তবে এই হাঁটা একলা হাঁটেননি তিনি। বহু ধরনের মানুষ ছিলেন তাঁর সঙ্গে। স্থূল মডেল, নির্দিষ্ট গোত্রের চিহ্ন বহন করা মডেল, এমনকি শ্বেতীরোগে আক্রান্ত মডেলও হেঁটেছেন এই আয়োজনে।

এতটা পথ হাঁটতে গিয়ে

এত লম্বা ক্যাটওয়াকের প্রতিটি অংশেই ওলোলাদেকে আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিল। দৃষ্টিনন্দন সব পোশাক পরেছিলেন তিনি। এসব পোশাকের অনেকগুলোই তাঁর দেশ নাইজেরিয়ায় তৈরি করা। এত বড় আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রশিক্ষণ ও চর্চা চালিয়ে গিয়েছিলেন নিয়মিত। তবে এতটা লম্বা পথ হাঁটতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই পায়ে যন্ত্রণা হয়েছে সেই সময়। যখন পা ফেলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল, তখন পায়ে জড়িয়ে নিয়েছেন ব্যান্ডেজ। নিজেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই হাঁটা কেবল নিজের জন্য হাঁটছেন না তিনি, হাঁটছেন অন্যদের জন্যও। সেই ক্যাটওয়াকে তিনি প্রতিবার পা ফেলছিলেন মডেলিং আর ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজে প্রচলিত সব একপেশে ভাবনা আর চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে একেকটি পদক্ষেপ হিসেবে। বহু মানুষ নিজেদের কাজ ফেলে তাঁকে উৎসাহ দিতে এসেছিলেন। এই ব্যাপারটাও ছিল তাঁর জন্য ইতিবাচক।

আপনি যেমন, তেমনই দারুণ

লাগোস ফ্যাশন উইকের সেই ঘটনার পর ওলোলাদে ভেবেছেন সেই সব মানুষের কথা, সমাজের প্রচলিত চিন্তাভাবনার জাঁতাকলে পড়ে যাঁরা পদে পদে বাধার সম্মুখীন হন। সৌন্দর্য কি আদতে পাল্লা–পাথরে মেপে দেখার বস্তু? গায়ের রং, ত্বকের অবস্থা, উচ্চতা কিংবা শারীরিক গড়ন তো কারও পরিচয় হতে পারে না। প্রতিভা, মেধা আর পরিশ্রম দিয়েই বরং একজন মানুষকে মূল্যায়ন করা উচিত। অক্টোবরের ফ্যাশন আয়োজনে সেই বার্তাই ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন ওলোলাদে। সমাজের চোখে আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্যে ‘খামতি’ থাকতে পারে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী হলে আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন নিশ্চয়ই।

সূত্র: গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ