নারীর ভাগ্যোন্নয়নে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন
দেশের অর্ধেকই নারী। বিভিন্ন বয়সী হলেও তাদের সবারই একটি সমস্যার মধ্যে দিয়েই জীবন পার করতে হয়। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কড়া রক্তচক্ষু নারীকে প্রতিনিয়ত দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। নারীর যোগ্যতাকে, মেধাকে গুরুত্ব না দিয়ে পাশবিক বল প্রয়োগ করে নারীর প্রতি অন্যায়- আচরণে অভ্যস্ত এ সমাজ। নারী প্রতিনিয়ত নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে জীবন পার করে চলেছে। তবু জীবনের দৌড়ে তাকে একের পর এক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
আধুনিক যুগে বসবাস করেও সমাজ আজও পুরানো ধ্যান-ধারণা-সংস্কারে মোড়া। এর ফলে নারীরা যোগ্যতা দিয়ে নিজের স্থান করে নিতে চেষ্টা করলেও প্রতিনিয়ত তাকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। সীতা যেমন বারবার অগ্নিপরীক্ষা দিয়েও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্থান পায়নি আজকের নারীরাও কোনোমতেই যেন পুরুষতান্ত্রিকতার নাগপাশ মুক্ত হতে পারছে না। নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিই পারে সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে।
আমরা পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে বসবাস করি। স্বভাবতই পিতার শাসনানুযায়ী পরিবার পরিচালিত হয়। ফলে পুরুষ যেহেতু পরিবার প্রধান তাই নারীকে তার ইচ্ছে, রুচি, মন-মর্জি অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হয়। ফলে পরিবার কর্ত্রী মা তার কন্যা সন্তানকেও এই নিয়মানুযায়ী জীবন পালনে অভ্যস্ত করে তোলেন। পুরুষের আনুগত্য মেনে জীবনে না চললে পরিবারে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। পুরুষ প্রভু স্বরূপ।
নারীরা আজীবন পুরুষের আশ্রয়ে বা নির্ভশীল হয়ে জীবন পার করে এসব পরিবারের শিক্ষা। মায়েরা নিজে একজন নারী ফলে কন্যা সন্তানের মধ্যে নারী সুলভ আচার-আচরণ, জীবনবিধান মেনে চলতে শিক্ষা দেন। কিন্তু বেশিরভাগ পরিবার কন্যা সন্তানকে একজন পূর্ণ মানুষ রূপে গড়ে তুলতে পারেন না বা চান না। শৈশবের এই শিক্ষা নারীকে যেমন আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন করে তুলতে বাধা দেয় তেমনই পুরুষের শোষণকে সারাজীবন আনুগত্যের রূপ বলেই গ্রহণ করে থাকে। তাই জীবনের কোন একটা পর্যায়ে গিয়ে যদি সমস্যার সম্মুখীন হয় সেখান থেকে বেরিয়ে আসা নারীদের পক্ষে প্রায় অসাধ্য হয়তো ওঠে।
আবার কেউ যদি সেই শক্তি বা সাহস গ্রহণ করে নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে চায় সমাজ তাকে আজীবন ওই শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখে বিচার-বিশ্লেষণ করে। নারীর প্রতি শোষণের অন্যতম কার পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। যার সৃষ্টি হয় পরিবারেই। একজন মায়ের দ্বারা সন্তান বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। তাই মায়েরা যদি ছেলে সন্তান এবং কন্যা সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন, কোনো প্রকার বাছ-বিচার না করেন তবে প্রাকৃতিকভাবেই তারা সুন্দর মতো লালিতপালিত হবে। কিন্তু আমাদের সমাজ ছেলেকে ছেলে রূপে এবং মেয়েকে মেয়ে রূপে গড়ে তোলে। তাদের মধ্যে মানবসত্তা নয় বরং একটি ছেলে এবল মেয়ের সত্তা গড় তোলে যার কারণে সমাজে এত হানহানি, বিদ্বেষ, বৈষম্য, নির্যাতনের শিকার নারীরা। তবে যেদিন মানব সন্তানকে পুরুষতান্ত্রিকতার নাগপাশ থেকে বের করে এনে মানুষ রূপে পালন করা হবে সেদিন মানবের মুক্তি ঘটবে।
নারীর প্রতি অবিচার বন্ধে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে পরিবার থেকেই। পরিবারে যদি সমতা বিধান করা যায় তবে বৃহত্তর পর্যায়ে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবেই। পুরুষ তার কর্তৃত্ব, নারী তার কর্তৃত্ব বাদ দিয়ে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে পরিবারকে। সমান অংশীদার, সমান দায়িত্ব-কর্তব্য পালনীয়-গ্রহণীয়, কেউ কারও থেকে বড় বা ছোট নয়, সবাই মানুষ। এই মানুষ হয়ে ওঠার মূলধন মনুষ্যত্বই পারে নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান-শ্রদ্ধা দিতে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ইতিবাচক মনোভাব নারীর জীবনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যার ফলে সমগ্র মানুষের কল্যাণ তথা দেশের কল্যাণ হবে।