নারীর কর্মসংস্থান বাড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতি বাড়বে ২৯ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মূলত জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশের কার্যকর অবদানের উপর নির্ভর করে। অথচ নারীদের বিশাল অংশ এখনও শ্রমবাজারে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত হতে পারছে না। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যদি নারীদের কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। নারীর কর্মসংস্থান বাড়ানো শুধু অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক অগ্রগতির জন্যও এটি এক অবিস্মরণীয় সুযোগ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি তুলে ধরে যে নারীদের শ্রমশক্তিতে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলা সম্ভব।বর্তমানে বাংলাদেশে নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম হলেও, সুযোগ সৃষ্টি এবং সামাজিক বাধা কমানোর মাধ্যমে নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। নারীর কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, এবং কর্মক্ষেত্রে সমতার পরিবেশ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের হার এখনও আশানুরূপ নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৩৬ শতাংশ, যেখানে পুরুষের অংশগ্রহণ ৮৪ শতাংশ। এই বিশাল পার্থক্য নারীদের শিক্ষা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তাহীনতা এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির মতো চ্যালেঞ্জের কারণে তৈরি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, নারীদের কর্মসংস্থানে আরও অন্তর্ভুক্তি কেবলমাত্র শিল্প বা সেবা খাতেই নয়, কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসাতেও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে পোশাক শিল্পে নারীদের প্রভাব ব্যাপক হলেও, অন্যান্য সেক্টর যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, ই-কমার্স ও পর্যটন খাতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও সীমিত। এই সুযোগগুলো পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারলে, দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি পাবে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, নারীদের কর্মসংস্থানে আরও অন্তর্ভুক্তি কেবলমাত্র শিল্প বা সেবা খাতেই নয়, কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসাতেও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে পোশাক শিল্পে নারীদের প্রভাব ব্যাপক হলেও, অন্যান্য সেক্টর যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, ই-কমার্স ও পর্যটন খাতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও সীমিত। এই সুযোগগুলো পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারলে, দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি পাবে।
নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া শুধুমাত্র তাদের আর্থিক স্থিতি বৃদ্ধি করবে না, বরং তাদের পরিবারেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একজন নারী যখন আর্থিকভাবে স্বাধীন হন, তখন তার সন্তানদের শিক্ষায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জীবনে পরিবর্তন আসে। এছাড়াও, নারীর কর্মসংস্থান সামাজিক ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
যদিও নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে, কিন্তু এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সামাজিক নিয়মকানুন, কাজের পরিবেশে নিরাপত্তার অভাব এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য নারীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে দরকার সরকারি উদ্যোগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি। কর্মক্ষেত্রে নারী বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারলে, তা তাদের কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো একটি সময়ের দাবী, যা শুধু অর্থনীতিকে মজবুত করবে না, বরং সমাজের সামগ্রিক পরিবর্তনের পথ সুগম করবে। বিশ্বব্যাংকের এই গবেষণাটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, নারীর কর্মসংস্থান বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য পূরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক নীতি-নির্ধারণী পদক্ষেপ এবং নারীদের প্রতি সমাজের মনোভাবের পরিবর্তন।