বাসদ নেতাদের বিরুদ্ধে যৌননিপীড়নের অভিযোগ: সুষ্ঠু তদন্ত হোক
বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতনের মাত্রা ভয়ংকরভাবে বেড়েছে। ঘরে-বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নারীরা যেই ঘরের বাইরে বের হতে শুরু করেছেন, তখনই নির্যাতন নতুন রূপ নিয়েছে। একশ্রেণির বিকারগ্রন্থ ও নৈতিক স্খলনযুক্ত মানুষ এসব কর্মে উদ্যোগী হচ্ছে! কর্মক্ষেত্রে, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কাজে কোথাও নারীরা আজ নিরাপদ নয়। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মানসিক বিকৃতি, দৃষ্টিভঙ্গি অন্যতম দায়ী।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ। তবে সেই অভিযোগকে আমলে নিচ্ছে না বাসদ। এই সংগঠনের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অভিযোগ আমলে নেননি দলটির নীতিনির্ধারকরা। বরং তারা নানাবিধ টালবাহানা করে অভিযোগকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছেন বলেও খবরে এসেছে।
বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ ঘটনাকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ ; ‘অতিরঞ্জিত ও টাচ বিষয়ে বুঝতে না পেরে ভুল বোঝাবুঝি’র মতো শব্দগুলো ব্যবহার করে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার তাদের এমন কাজের পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য থাকলেও তারা এর সুরাহা না করে বরং দলের কিছু নারী নেত্রীকে দিয়ে ফেসবুকে নানা প্রচারণাও চালাচ্ছেন! ফলে বিষয়টি আরও দৃষ্টিকটু হয়ে উঠেছে।
দলটির ছাত্র সংগঠনের (সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট) সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান গত ৭ জুন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক গর্ভপাত করানো, যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো দলীয়ভাবে ধামাচাপা দেওয়া ও ভিকটিম (যৌন হয়রানির শিকার) ব্লেমিংসহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ করেন। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানান অন্য ছাত্রনেতারা। শোভন রহমানের ফেসবুক পোস্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ ফেসবুকে প্রকাশিত হতে থাকে। যদিও অভিযোগের আঙুল যাদের দিকে—সেই তারা বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগগুলোকে ‘মিথ্যা’, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘বানোয়াট’ বলে অভিহিত করেন।
গণমাধ্যমে উঠে আসা সংবাদ, ফেসবুক পোস্ট বিবিধ বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক বা বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হতেই পারে। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি। বাসদের মতো একটি দলের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ এবং কার্যাকলাপ সমাজের কদর্য দিকের প্রতি ঈঙ্গিত করে। নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়; এই অভিযোগই এর বড় প্রমাণ। বাসদ ঘটনাটি আমলে নিক বা না নিক যেহেতু নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু এখানে আইনের হস্তক্ষেপ জরুরি। ঘটনার উপর্যুপরি বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এর সত্যতা যাচাই করতে হবে।
যৌন হয়রানি কোনো হেলাফেলার বিষয় নয়। এই অপরাধ এমন এক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যা আরও অপরাধের জন্ম দেয়। ফলে শত্রুকে বিনাশ করতে হলে সমূলে উৎপাটন করা প্রয়োজন। নতুবা যারা নারীদের ভোগ্য পণ্য ভাবেন, তারা প্রতিনিয়ত এই পথে হাঁটবেন! ফলে ঘটনা যাইহোক না কেনো এর সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি। অপরাধ করে কেউ যেন পার পেয়ে না যায়, সেলক্ষ্যে প্রশাসনেরও নজরদারি প্রয়োজন। সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তবেই নারীরা ভবিষ্যতে কিছুটা হলেও এসব থেকে পরিত্রাণ পাবেন।