নারীর প্রতি পুরুষতন্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হোক
নারীরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে দিনে-দিনে বিশ্বের বুকে দেশের নাম উজ্জ্বল করলেও তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়নি৷ একশ্রেণির মানুষ আছে, যারা নারীকে কোনোভাবেই সম্মান করতে পারে না। যেখানে নারীরা তাদের সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে, সেখানেও কোনো না কোনোভাবে নেতিবাচক মন্তব্য করতে পিছপা হচ্ছে না। তাদের মানসিকতা পরিবর্তন নাহলে সমাজের অগ্রগতি মুখ থুবড়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
সম্প্রতি দেশে এবং দেশের বাইরে নারীদের অগ্রগতি দৃশ্যমান। নারীরা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় যেমন অংশ নিচ্ছে, তেমনি খেলার মাঠও কাঁপাচ্ছে। নারীদের এই অংশগ্রহণ বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। তবে নারীরা যতই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ততই তাদের টেনে নিচে নামানোর প্রয়াস চলছে।
বিভিন্ন কারণে এখন দাম্পত্য সংকট ও বিচ্ছেদের পরিমাণ বেড়েছে। পূর্বের তুলনায় তা অনেক। কিন্তু সেই সঙ্গে সমাজের নানাবিধ উত্থান-পতনও ঘটেছে। যান্ত্রিকজীবনে মানুষের মাঝে অস্থিরতা বেড়েছে। মনোমালিন্য, অশ্রদ্ধা-অসম্মান, যোগ্য মূল্যায়ন, মনের অমিল বহুবিধ কারণে ডিভোর্সের হার বেড়েছে। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এসবের জন্যও নারীকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে! অধিকাংশই নারীর উচ্চশিক্ষা ও স্বাবলম্বী হওয়াকে দুষছেন। কিন্তু এ সমাজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষের নির্যাতনের কথা স্বীকার করে না।
দিনের পর দিন নারীর ওপর নির্যাতনকে তারা ধামাচাপা দিতে চায়। মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করেই যেন এ পৃথিবীতে নারী দাসত্বের শিকার। নারীর ওপর শত অত্যাচার হলেও পরিবার-পরিজন সর্বদা নারীকে চুপ থাকার পরামর্শ দেয়। মেনে নিয়ে ও মানিয়ে নিয়ে সংসারে দাঁতে-দাঁত চেপে টিকে থাকার পরামর্শ দেয়। সত্যিকার অর্থে প্রত্যেক নারীই চায়, তার সংসার জীবনকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে ও সাজিয়ে তুলতে। কিন্তু পুরুষের খামখেয়ালি, অবহেলা, অসম্মান-অশ্রদ্ধা, মনের অমিল বহুবিধ কারণে তারা একসময় হাল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোনো একজনকে দোষারোপ করা সম্পূর্ণ বিচার-বিবেচনাহীন। এক্ষেত্রে সংসারের দায়ও নারীকেই দেওয়া হয়। পুরুষের মতি-গতিকে যদি একজন নারী বাঁধতে না পারে, তবে তার দিকে আঙুল তোলা হয়।
পরিবার-সমাজ-সংসার-কর্মক্ষেত্রে-খেলার মাঠে সর্বদা নারীকে দোষী সাব্যস্ত করে এই বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ স্বস্তিবোধ করে। তাদের ধারণা, সবকিছুর জন্যই নারী দায়ী। নারী দায়ী তার পরিবারে-সংসারে শান্তি না আনার জন্য। নারী দায়ী তার কর্মক্ষেত্রে যৌননিপীড়ন-হেনস্তার শিকারের জন্য। এমনকি নারী দায়ী খেলার মাঠে অংশগ্রহণের জন্যও! এর কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে শুধু অবরুদ্ধ দেখতে চায় পুরুষতন্ত্র। নারীর কোনো স্বাধীন জীবন থাকতে পারে না। তাদের মন বলে কিছু থাকতে পারে না।
কদিন আগে, ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অবিস্মরণীয় জয়ের পর একশ্রেণির মানুষ পড়ে আছেন নারী কেন খেলবে, এই নিয়ে! তারা চায় না নারীরা মাঠে খেলক। বিশ্বের বুকে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করুক। আর তাই তাদের ধারণা ও বিশ্বাস নারীদের অবস্থান ঘরে। মাঠে গিয়ে খেলার অধিকার তাদের নেই। ঘরে-বাইরে অবরুদ্ধ করে রাখতেই নারীকে প্রতিনিয়ত বাঁধা হচ্ছে। তবু বাধার দেওয়াল নারীরা যে টপকাচ্ছে না, এমন নয়। যদি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতো, তবে নারীর কাজের পরিসর আরও সুপ্রসারিত হতো।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তারা নারীদের ওপর ক্রমাগত অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়েছে। শেষপর্যন্ত তারা নারীদের বিউটি পার্লারও বন্ধ করে দিয়েছে। এমন ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর আমাদের দেশেও কেউ কেউ ফেসবুকে বাঙালি নারীদেরও জন্য এমন জীবন কামনা করছে। প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের লিংকগুলোতে প্রবেশ করলেই তার প্রমাণ মিলবে।
সমাজে পুরুষ যদি নারীর পথের কাঁটা না হয়ে সহোযোগী হয়ে উঠতো, তবে নিশ্চয়ই সমাজের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দৃশ্যমান হতো। এ লক্ষ্যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হলে নারীরা স্বস্তিতে জীবন নির্বাহ করতে সক্ষম হতো। তাই সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে হবে নারীর প্রতি। যদি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়, তবে এ সমাজে নারীর মুক্তি মিলবে ও বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।