বিদেশে নারী কর্মী প্রেরণে দুই বছরে ৪০% হ্রাস
বিদেশে নারী কর্মসংস্থানের প্রধান গন্তব্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, যেখানে অধিকাংশ নারী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যান। তবে অনেকেই সেখানে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন। যৌন নিপীড়নের অভিযোগও রয়েছে, যা নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে গত দুই বছর ধরে বিদেশে নারী কর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন নারী কর্মী বিদেশে গেলেও ২০২৩ সালে তা কমে ৭৬ হাজার ১০৮ জনে নেমে আসে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আরও কমে দাঁড়ায় ৬১ হাজার ১৫৮ জনে। অর্থাৎ, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ২৮ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

মানিকগঞ্জের ফিরোজা বেগম দুই বছর সৌদি আরবে কাজ করে দেশে ফিরে আসেন। অসুস্থতার কারণে গত অক্টোবরে দেশে ফেরত আসা ফিরোজা জানান, প্রথম বছরে বেতন নিয়মিত পেলেও দ্বিতীয় বছরে টানা ১১ মাস কোনো বেতন পাননি। দেশে ফেরার সময় সব বেতন দেওয়া হলেও খাবারের সমস্যা এবং মারধরের অভিজ্ঞতা তার জন্য ছিল অত্যন্ত কষ্টকর।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়লেও নারীদের অংশগ্রহণ কমছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর এক লাখের বেশি নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে এই হার কমে যায়। যদিও পরের দুই বছরে কিছুটা বৃদ্ধি পায়, গত দুই বছর ধরে এ হার আবার কমছে।
বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, নারী কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়েছে। প্রশিক্ষণ এক মাস থেকে বাড়িয়ে দুই মাস করা হয়েছে। পাশাপাশি গৃহকর্মী পাঠানো নিয়ে নেতিবাচক প্রচার এবং সৌদি নিয়োগকর্তাদের আগ্রহ হ্রাস পাওয়ায় নারীদের বিদেশে যাওয়ার সংখ্যা কমছে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫৬টি দেশে নারী কর্মী পাঠানো হয়েছে। তবে ৩০টি দেশে ১০ জনের কম এবং ১৬টি দেশে মাত্র ১ জন নারী কর্মী গেছেন। সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে ১ হাজারের বেশি নারী কর্মী গেছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র সৌদি আরবেই গেছেন ৬৬ শতাংশ নারী, যা সংখ্যার হিসেবে ৪০ হাজারের বেশি।
ফরিদপুরের শাহিদা বেগম সৌদি আরবে দুই বছর তিন মাস কাজ করে দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি জানান, কাজের সময় নিয়মিত খাবার ও বেতন পেতেন না। নিয়োগকর্তার ছেলে তাকে মারধর করত। এমনকি চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তা করা হয়নি। দেশে ফেরার টিকিটের টাকা তার বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অর্থকষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, ওকাপ ও নারী শ্রমিক কেন্দ্র দেশে ফিরে আসা কর্মীদের সেবা দিয়ে থাকে। এসব সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অনেক নারী অসুস্থতা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে দেশে ফিরেছেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের একাধিক বাসায় কাজ করানো, অনিয়মিত বেতন, দীর্ঘ সময় কাজ করা, এবং খাবার না দেওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
ওকাপের চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম বলেন, গৃহকর্মী ছাড়া অন্য খাতে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। গৃহকর্মীদের মধ্যে নিপীড়নের ঘটনাগুলো নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। ফলে মিথ্যা প্রলোভনে নারীদের বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ কমছে।