স্তন ক্যানসার সচেতনতা বাড়াতে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান

স্তন ক্যানসার শনাক্তকরণে সচেতনতার অভাবে অনেক নারী স্ক্রিনিং বা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান না। এ ছাড়া, সরকারিভাবে স্ক্রিনিং কার্যক্রমের অভাব ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে বেশির ভাগ রোগীকে বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হতে হয়। ফলে, অনেকেরই চিকিৎসা ব্যয়ে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। বক্তারা স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্যানসার রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু, সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা এবং জনগোষ্ঠীভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন চালুর ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যানসার হাসপাতাল ও কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের সহযোগিতায় মাত্র ৫ হাজার টাকায় ১০০ জন স্তন ক্যানসার আক্রান্ত নারীর অস্ত্রোপচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চারজনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও ৬৭ জনের চিকিৎসার তালিকা প্রস্তুত।
আইএআরসির ২০২০ সালের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৩ হাজার ২৮ জন নতুন স্তন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হন, আর বছরে প্রায় ৬ হাজার ৭৮৩ জন এই রোগে প্রাণ হারান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের ২০২১ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে প্রতি ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বছরে গড়ে ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৫ টাকা। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে খরচ কিছুটা কমলেও বেশিরভাগ রোগী বেসরকারি হাসপাতাল বা বিদেশে যেতে বাধ্য হন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন, দেশে ক্যানসার স্ক্রিনিং কার্যক্রম এখনও অসংগঠিত ও ত্রুটিপূর্ণ। এ ছাড়া, সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য জরুরি যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতার অভাব রয়েছে, যা রোগীদের বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করছে এবং দেশে আর্থিক ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, দেশে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজের সমন্বয়হীনতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
অনুষ্ঠানে স্তন ক্যানসার নিয়ে রিপোর্টিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ১০ জন সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে স্তন ক্যানসার সচেতনতা কার্যক্রমে যুক্ত পাঁচজন প্রয়াত ব্যক্তিকে স্মরণ করা হয়।
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, নারী অধিকার ও স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনকে একসঙ্গে কাজ করে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, দেশের ভেতরে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার সম্প্রসারণে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।