Skip to content

৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেথির নানান উপকারিতা

মেথির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু এর গুণাগুণ সম্পর্কে  অনেকেরই অজানা। মেথিতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর মতো বিস্ময়কর শক্তি। পাশাপাশি মেথি তারুণ্য ধরে রাখার মতো এক বিশেষ উপাদান।মেথির স্বাদ তিতা হয়ে থাকে। তিতা স্বাদের জন্য অনেকের কাছেই মেথি একটি অপছন্দের খাবার। তবে স্বাদ যেমনই হোক এর পুষ্টিগুণ অনেক।
মেথিকে ইংরেজিতে বলা হয় “Fenugreek”। মেথি মসলা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। আবার রোগীর পথ্য হিসেবেও কার্যকর। আয়ুর্বেদিক কিংবা ইউনানি বা কবিরাজি চিকিৎসায় প্রধান উপাদানই  মেথি। বাঙালিরা মেথির শাকও বেশ পছন্দ করে। মেথি একটি অত্যন্ত উপকারী ভেষজ, যা স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য অনেক উপকার নিয়ে আসে। মেথির বীজ ও পাতা উভয়ই ব্যবহৃত হয়। এখানে মেথির কিছু উপকারিতা দেওয়া হলো:

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ 
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মেথি শ্রেষ্ঠ পথ্য। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মেথি দারুন কাজ করে। মেথির মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ বেশি। মেথি ইনসুলিনকে সক্রিয় করে তোলে যা রক্তের মধ্যে গিয়ে সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফাইবার থাকার কারণে হজম করার প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় মেথি। এর ফলে শরীর খুব দ্রুত শর্করা ও সুগার শোষণ করে নিতে পারে না। যা রক্তে দ্রুত সুগার বাড়তে দেয় না। মেথি বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন প্রতিরোধের ব্যক্তিদের মধ্যে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে।

হজমে সহায়তা
মেথি ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় মেথি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে এবং এইভাবে হজমে সহায়তা করে। কিছু ক্ষেত্রে, মেথি চা বদহজম এবং পেট ব্যথা উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। মেথি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। মেথি পেটের গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কমায়।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
মেথিতে থাকে স্টেরিওডাল সেপোনিনস নামক উপাদান যা শরীরে থাকা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া মেথিতে গ্লেকটোম্যানান নামক আরেকটি  উপাদানের খোঁজ পাওয়া গেছে যা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া মেথিতে থাকা পটাশিয়াম রক্তে লবনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে যার ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

চুলের যত্ন
মেথি চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি কার্যকরী উপাদান। মেথিতে উপস্থিত প্রোটিন এবং ন্যাচারাল ফ্যাট চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মেথির বীজকে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগালে চুলের গোঁড়া মজবুত হয় এবং চুল পড়া কমে যায়। মেথির পেস্ট নিয়মিত ব্যবহার মাথার ত্বকে পুষ্টি দেয় এবং খুশকির সমস্যা দূর করতে সহায়ক। মেথির পেস্ট চুলের গোড়ায় লাগালে চুল পড়া কমে এবং চুল মজবুত হয়। 

ত্বকের যত্ন
মেথি ত্বকের জন্যও খুব উপকারী। মেথি  ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। মেথির পেস্ট ত্বকে লাগালে ত্বকের দাগ এবং বলিরেখা কমে যায়। মেথি ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক পাওয়ার জন্য সহায়ক। 

প্রজনন স্বাস্থ্য
মেথি মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। মেথি পিরিয়ড চক্র নিয়মিত করতে এবং পিএমএসের উপসর্গ কমাতে সহায়ক।মেথি আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তস্বল্পতা, অর্থাৎ অ্যানিমিয়া রোগের পথ্য হিসেবে কাজ করতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেথি নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেনের স্তর বাড়াতে সহায়তা করে, যা গর্ভাবস্থার সময় গুরুত্বপূর্ণ। মেথি নারীদের স্তন্যপান ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক বলে বিবেচিত।

ওজন কমাতে সহায়ক
মেথি বীজ খেলে তা ক্ষুধা কমাতে সহায়তা করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।মেথি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, ফ্যাট মেটাবলিজমে সহায়তা করে, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে আর হজমে সহায়তা করে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

মেথি একটি বহুমুখী উদ্ভিদ যা খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং রূপচর্চায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো মানবদেহের জন্য অপরিহার্য। প্রতিদিনের ডায়েটে মেথি অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তবে, মেথি ব্যবহারের আগে কোনো চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষত গর্ভবতী মহিলা এবং অসুস্থদের জন্য।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ