Skip to content

২৪শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পূজো ও চালচিত্র

বাংলার সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ হলো শারদীয় দুর্গাপুজা। এই উৎসব যেমন ধর্মীয় প্রার্থনার অনুষঙ্গ, তেমনই এটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে শিল্প, সংস্কৃতি এবং সমাজের মিলিভ সত্ত্বা। আর এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পরূপ হলো ‘চালচিত্র’। চালচিত্র বাংলার এক অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলা, যা মূলত দুর্গাপ্রতিমার পেছনে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রতিমার সঙ্গে এক অন্তর্গত সম্পর্ক তৈরি করে, যা পুজার আধ্যাত্মিক এবং নান্দনিক দিককে গভীরভাবে প্রকাশ করে।

চালচিত্র: কী ও কেন?

‘চাল’ শব্দটির অর্থ হলো প্রতিমার পেছনের কাঠামো বা ব্যাকড্রপ। চালচিত্র হল সেই কাঠামোতে আঁকা বা খোদাই করা শিল্পকর্ম, যা সাধারণত কাগজ, কাপড়, বা কাঠের ওপর করা হয়। দুর্গাপ্রতিমার পিছনে যে অর্ধবৃত্তাকার কাঠামো দেখা যায়, তা চাল হিসেবে পরিচিত, এবং তাতে চিত্রিত বিভিন্ন দেবদেবী, প্রকৃতির উপাদান, বা পুরাণ থেকে নেয়া নানা ঘটনার দৃশ্যই চালচিত্র নামে খ্যাত।

চালচিত্রের শিল্পরূপ ও বৈশিষ্ট্য

চালচিত্র মূলত পটুয়াদের হাতে তৈরি হয়, যারা প্রজন্ম ধরে এই শিল্পরূপকে সংরক্ষণ করে আসছেন। চালচিত্রে প্রধানত গৌরী, গঙ্গা, কার্তিক, গণেশ, এবং অন্যান্য দেবদেবীর চিত্রায়ণ দেখা যায়। এই শিল্পে প্রাণ, ফুল, পাখি, এবং বিভিন্ন প্রকৃতির উপাদানও প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। চালচিত্রের মাধ্যমে মূলত একাধারে দেবী দুর্গার শক্তির প্রকাশ এবং প্রকৃতির সঙ্গে তার অঙ্গীভূত সম্পর্ক প্রকাশ পায়। চালচিত্রের রঙ ও নকশা
নির্ভর করে স্থানীয় রীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপর। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে চালচিত্রের ধরণ ভিন্ন হলেও এর মূল ভাব ও উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত।

পূজোর সাংস্কৃতিক সংযোগ

দুর্গাপূজাকে শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে দেখা ভুল হবে, কারণ এর সঙ্গে সমাজের নান্দনিক এবং সাংস্কৃতিক দিকগুলো গভীরভাবে জড়িত। চালচিত্র সেই সংযোগের একটি মূল মাধ্যম, যেখানে ধর্মীয় চেতনাকে শৈল্পিক সত্ত্বার মধ্যে প্রকাশ করা হয়। চালচিত্র শুধু পুজোর মণ্ডপেই ব্যবহৃত হয় না, এটি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও প্রতিযোগিতায়ও স্থান পায়। অনেক শিল্পী চালচিত্রকে আধুনিক শৈলীতে ফুটিয়ে তুলছেন, যা বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পরূপকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে।

আধুনিককালে চালচিত্রের পরিবর্তন

আধুনিক সময়ে চালচিত্রের ব্যবহার কিছুটা কমে এলেও এর শিল্পমূল্য ও ঐতিহ্য এখনও টিকে আছে। কিছু শিল্পী এবং পটুয়া আধুনিক ডিজাইনের সাথে ঐতিহ্যবাহী চালচিত্রের মেলবন্ধন ঘটিয়ে নতুন রূপে এই শিল্পকে ফিরিয়ে আনছেন। অনেক পূজামণ্ডপে এখন চালচিত্রের পরিবর্তে লাইটিং, ডিজিটাল ব্যাকড্রপ ইত্যাদি ব্যবহৃত হলেও, জলচিত্রের শৈল্পিক গুরুত্ব অটুট রয়েছে।
চালচিত্র বাংলার পূজা সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রতীক। এর মাধ্যমে পুজোর ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে শৈল্পিক সৌন্দর্যের সংযোগ তৈরি হয়। আজকের সমাজে চালচিত্র কেবল পুজার সঙ্গেই নয়, বরং বাংলার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের অংশ হিসেবে সম্মানিত।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ