Skip to content

৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টি-শার্টে যত কথা

টি-শার্টকে আপনি আপনার পোশাক তালিকার কত নাম্বারে রাখবেন? বর্তমান শুধু তরুণ নয়, তরুণীদেরও একই পছন্দ। মূলত অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার কারণে এ পোশাক চাহিদার শীর্ষে।
তরুণ প্রজন্মের কাছে টি-শার্ট এখন আর শুধু পরিধেয়ই নয়, বার্তাবাহকও। বার্তাবাহক এই কারণেই কারণ টি-শার্ট যেন মনের কথা বলে টিসার যেন ব্যক্তিত্বের কথা বলে এমন ধরনের টি-শার্টই বেছে নেওয়া হয় যেখানে কোন একটা বিশেষ কোটেশন থাকে যে কোটেশনটি অবশ্যই যে বাক্তি পরিধান করে থাকে তার পছন্দের কিংবা তার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই।

গরমের জন্য অন্যতম একটি আরামদায়ক পোশাক হচ্ছে টি শার্ট। মূলত গরম থেকে বাঁচতেই টি-শার্টের সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯ শতকের শেষ দিকে কারখানার শ্রমিকেরা কারখানার গরম থেকে বাঁচতে নিজেদের জাম্পস্যুটের হাতা কেটে ছোট করে নিতেন। আস্তে আস্তে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে জনপ্রিয় হতে থাকে এই পোশাক। সর্বস্তরের মানুষের কাছে টি-শার্টকে জনপ্রিয় করে তোলেন অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো। পঞ্চাশের দশকে এ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার সিনেমায় অধিকাংশ দৃশ্যেই তাঁকে টি- শার্ট গায়ে দেখা যায়। পরবর্তী দুই দশকে গণমানুষের পোশাক হয়ে ওঠে টি-শার্ট।

বাংলাদেশে একবিংশ শতাব্দীতে এসে টি-শার্ট জনপ্রিয়তা লাভ করে। তখনকার বাজারে যেসব টি-শার্ট পাওয়া যেত, তার বেশির ভাগই ছিল গার্মেন্টসের বাতিল পণ্য। সুলভ মূল্যের সেসব টি-শার্টে মিলত বিদেশি নকশা।

কেমন হয় যদি বাংলাদেশি মানুষের জন্য বাংলার নিজস্ব নকশার টি-শার্ট থাকত?

ঠিক এই চিন্তা থেকেই যাত্রা শুরু করে ‘নিত্য উপহার’। নিত্য উপহার একটি আদি টি-শার্ট ব্র‍্যান্ড। যেই ব্র্যান্ডের কথা এখনো মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে দেশীয় ডিজাইনের টি-শার্ট বিক্রি শুরু করেন তাঁরা। তবে বর্তমানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষই ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে টি-শার্ট বেছে নিয়েছেন। পরতে আরাম, সব আবহাওয়ায় মানানসই, সব মিলিয়ে টি-শার্টের জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দেওয়া কঠিন। কিন্তু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কাছে টি-শার্টের সংজ্ঞা বদলে গেছে অনেকখানি। টি-শার্ট এখন আর ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে নয়, বরং বার্তাবাহক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। চলতি ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিলছে অভিনব সব ডিজাইন ও স্টাইল। গত কয়েক বছরে টি-শার্টের ধরনেও এসেছে বেশ পরিবর্তন। অটিসটি টি-শার্টের পরিবর্তে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন ড্রপ শোল্ডার টি-শার্ট। ড্রপ শোল্ডার টি-শার্ট এখন চাহিদার শীর্ষে।

ট্রেন্ডের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিনিয়তই নিজেদের আপডেট করছেন উদ্যোক্তারা। টি শার্ট মূলত তৈরি হয় তুলা অথবা পলিয়েস্টার দিয়ে। তবে স্বাচ্ছন্দ্যের দিক থেকে সব সময়ই এগিয়ে আছে তুলা। শতভাগ তুলার তৈরি টি-শার্ট যেকোনো আবহাওয়াতেই মানানসই। তবে জিএসএম (জিএসএম হলো গ্রাম /স্কয়ার মিটার, সহজ করে বললে- এক স্কয়ার মিটার কাপড়ের ওজন যত গ্রাম, সেটাই তার জিএসএম। আর স্কয়ার মিটার হলো এক মিটার দৈর্য্য ও এক মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট কোনো বর্ণ)-এর ওপর কাপড়ের গুণমান নির্ভর করে। জিএসএম যত বেশি, টি-শার্টের গুণগত মান তত ভালো। বেশির ভাগ টি-শার্টই ১৬০ থেকে ২০০ জিএসএমে তৈরি হয়। বংক টি-শার্টসের স্বত্বাধিকারী নাজমুল সাকিব আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের টি- শার্টে নিট অরন্ড ডায়িং ফেব্রিক ব্যবহার করে থাকি। এসব টি-শার্ট আগে থেকেই সিলিকন ওয়াশ দেওয়া থাকে। এতে ক্রেতা প্রথমবার পরিষ্কার করণে তা থেকে রং বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।’

তরুন-তরুণীদের কাছে টি-শার্ট এখন হয়ে উঠেছে একটি ক্যানভাস। সেই ক্যানভাসে নিজের পছন্দসই নকশা ভুলতে পারছে তারা। নিত্যনতুন মিম, আর্ট স্টাইলে সীমাবদ্ধ থাকছে না তারা। বরং যাপিত জীবনের সুখ- দুঃখ, রসবোধ, প্রতিবাদ, দেশপ্রেম- সবকিছুই ঠাঁই পাচ্ছে টি-শার্টে। কেউ কেউ আবার নিজের পছন্দের ব্র্যান্ড, খেলোয়াড়, টিভি, কবিতা, সিরিজ-সিনেমা-কমিক বুকের চরিত্র, চরিত্রগুলোর ডায়ালগ দিয়ে তৈরি করিয়ে নিচ্ছে টি-শার্ট। ক্রেতারা তা কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে বললে ভুল হবে, গত কয়েক বছরে টি-শার্ট বাজার পুরোপুরি অনলাইননির্ভর, বিশেষ করে করোনার পর অনলাইনভিত্তিক টি-শার্ট পেজের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণ। এর মধ্যে কেউ কেউ দোকান দিলেও বেশির ভাগ কেনাবেচাই চলে অনলাইনে। বেচাকেনা অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় তরুণদের কাছে অপশনও অনেক। এক পেজে পছন্দ না হলেই অন্য পেজে টু মারা যাচ্ছে, দাম ও মানে সন্তুষ্ট করতে পারলেই ক্রেতাকে ধরে রাখতে পারছেন উদ্যোক্তারাও। তবে তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে কাস্টমাইজড টি-শার্ট। কিছু অনলাইন পেজ তাদের ক্রেতাদের জন্য কাস্টমাইজড টি-শার্ট তৈরি করার অপশনও রেখেছে। ক্রেতারা চাইলেই নিজের পছন্দসই ডিজাইন দিয়ে টি-শার্ট বানিয়ে নিতে পারেন। নিজের পছন্দসই নকশা গায়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোতে যে আনন্দ, তা যেন টি-শার্টও দিতে পারে। মূলত অনলাইন এর কারনে টি-শার্টের বিজনেসটা অনেক বিস্তর হয়ে গিয়েছে।

টি-শার্টের রং এবং ধরনের মধ্যে বর্তমান সময়ে ড্রপ সোল্ডার খুব পরিচিত হলেও ওভাল নেক পছন্দের শীর্ষে।

টি-শার্টের ক্ষেত্রে সব ধরনের কালারই জনপ্রিয় হলেও কালো, খয়রি, ধূসর, থাকি, সবুজ, নীল, নেভি, মাস্টার্ড কালার গুলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

টি-শার্ট ধোয়ার পরে অবশ্যই অতিরিক্ত রোদে টি শার্ট শুকাবেন না। এছাড়া গরম জল দিয়ে টি-শার্ট না ধোয়াই ভালো এবং খুব হালকা ডিটারজেন্ট দিয়ে টি-শার্ট ধোয়ার চেষ্টা করবেন। এতে করে টি-শার্টের রং দীর্ঘদিন অক্ষুন্য অবস্থায় থাকবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ