কুকুর কেন মানুষের চেয়ে কম বাঁচে!
উলফহাউন্ড জাতের বৃদ্ধ কুকুরকে পরীক্ষা করা হয়। কুকুরের মালিক রন, তার স্ত্রী লিসা, এবং তাদের ছোট্ট ছেলে শেন। সবাই বেলকারের সাথে খুবই অন্তরঙ্গ ছিল এবং তারা বেলকারের জন্য ভালো কিছু আশা করছিল যা হয়তো কিছুটা হলেও অলৌকিক হওয়া দরকার ছিল।
বেলকারকে পরীক্ষা করে দেখা গেল সে মারা যাচ্ছে ক্যান্সারে। বেলকারের জন্য কিছুই করা যাচ্ছিলো না। বাড়িতে বৃদ্ধ কুকুরটির জন্য ইথানাসিয়া পদ্ধতি প্রয়োগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এটা আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে যন্ত্রণা ও ভোগান্তি থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি দেয়ার একটা উপায়।
যখন প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করা কাজ চলছিল রন এবং লিসা বলেছিল যে তারা চায় যে তাদের ৬ বছর বয়সী শেন এইসময় তাদের সাথে থাক। তাদের মনে হয়েছিল শেনের এই অভিজ্ঞতাটা নেয়া দরকার, এই ঘটনা থেকে সে যেন কিছু শিখতে পারে।
পরের দিন, সেই পরিচিত অনুভূতি আবার অনুভবিত হচ্ছিল। বেলকারের পরিবার তাকে ঘিরে বসে আছে। শেন খুব শান্তই ছিল, শেষবারের মতো বুড়ো কুকুরটির গায়ে হাত বুলাচ্ছিল এবং সে বুঝতে পারছিল যে কি হচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে, শান্তিপূর্ণভাবে বেলকারের সব যন্ত্রণার অবসান হলো।
ছোট্ট ছেলেটি কোন আতঙ্ক বা বিভ্রান্তি ছাড়াই তার প্রিয় কুকুরটির চলে যাওয়াকে গ্রহণ করেছিল বলেই মনে হয়েছিল। বেলকারের মৃত্যুর পরে কিছুক্ষণ একসাথে চুপচাপ বসেছিল সকলে, তারপর নিজেদের মধ্যেই আলাপ করছিল, কুকুর নিয়েই। শেন চুপচাপ বসে মনোযোগ দিয়ে সব শুনছিলো। যখন কথায় কথায় আসলো যে "কুকুরের জীবন মানুষের তুলনায় এতো ছোট কেন?", শেন সাথে সাথে বলে উঠলো, "আমি জানি কেন।"
চমকে উঠে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। সে যা বলল তা অবাক করে দিলো। সে বলেছিল, "মানুষকে জন্মের পর থেকে সারাক্ষণ শিখতে হয় যে কিভাবে সুন্দর জীবনযাপন করতে হয় – যেমন সবাইকে ভালোবাসা এবং ভালো থাকা, তাই না?" শেন বলেই চললো, "ঠিক আছে, কিন্তু কুকুররা ইতোমধ্যেই এগুলো সবই জানে, তাই তাদের ততদিন বাঁচা লাগে না যতদিন আমাদের লাগে।"
খুব সাধারণ ভাবে বাঁচা, উদারভাবে ভালবাসা, গভীরভাবে কেয়ার করা, বিনয়ী এবং দয়াশীল আচরণ করা। একটি কুকুর যদি আমাদের শিক্ষক হয় তাহলে আমরা শিখতে পারবো মূল ধারায়। প্রিয়জন বাড়িতে ফিরলে, দৌড়ে গিয়ে তাদের অভিবাদন জানানো। ভ্রমণে যাওয়ার সুযোগ কখনই হাতছাড়া না করা। প্রতিদিন তাজা বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়া। পর্যাপ্ত সময় ঘুমানো, ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, ব্যায়াম, দৌড়ঝাঁপ, এবং প্রতিদিন কিছুসময় খেলাধুলা করা।
গভীর মনোযোগ দেয়া, অন্যের সংস্পর্শে আসা এগুলো কুকুরের সহজাত অভ্যাস। সাধারণ গর্জন করলে যেখানে কাজ হয় সেখানে কামড়ানো থেকে বিরত থাকা। গরমের দিনে প্রচুর পানি পান করা, গাছের ছায়ায় খানিকটা শুয়ে থাকা। খুশি হলে, পাশের মানুষকে বুঝতে দেয়া, কৃতজ্ঞতা জানানো। কুকুরের বিশ্বস্ততা খুবই অকৃত্রিম। মিথ্যা ভান কখনোই তারা করে না। কারো খারাপ সময়ে চুপচাপ পাশে থাকা, কাছাকাছি বসা, আলতো করে স্পর্শ করা। একটি ভালো কুকুরের কাছ থেকে আমরা এই সুখের রহস্যগুলো শিখে নিতে পারি। যা থেকে পরিবর্তিত করে নেওয়া যেতে পারে এক নতুন জীবন।