নারী হত্যা বন্ধ হবে কবে!
যুগের চাহিদায় মানবজীবনের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে কিন্তু নারীর সার্বিক মঙ্গল আজও সম্ভব হয়নি। ঘরে-বাইরে নারী শুধু অনিরাপদই নয় বরং তার জীবন সংশয়ও ঘটছে অহরহ। গত কয়েক বছর যাবৎ নারী হত্যা-গুম প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। এই নজিরবিহীন চিত্র সমাজের অবক্ষয়কে চিহ্নিত করে! যে সমাজে নারী নিরাপদ নয় সে সমাজ শিশুদের জন্যও নিশ্চিয়ই মঙ্গলজনক নয়! অবকাঠামোগত যত উন্নয়ন বাড়ছে মানুষের মাঝে ততো ক্রোধ ও রূঢ়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে! যেন ইট-পাথরের পৃথিবীতে মানুষের হৃদয়ও শক্ত কংক্রিটে রূপ নিয়েছেয় কোথায়ও স্বস্তি নেই। নারীর শান্তি নেই।
ঘরে যেমন নারী স্বামী-শাশুড়ি-আত্নীয়-অনাত্নীয়-পরিজন দ্বারা নির্যাতন-নিপীড়ন-হুমকি-খুনের শিকার ঠিক বাইরেও তার ব্যত্যয় ঘটছে না। নারী এক বিভীষিকাময় পরিবেশে বসবাস করছে। পুরুষতান্ত্রিকতার যত ক্রোধ সবই নারী-শিশুর ওপর বর্তাচ্ছে। মানুষের এই অমানবিক নির্যাতনের শিকার নারী। এখনই সময় সামগ্রিক পরিবর্তনের। এর জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় মানবিকতা, ঔদার্য, সহনশীলতার শিক্ষা জরুরি। আশা করা যায়, নতুন কারিকুলাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আশানুরূপ শিক্ষা ও সাফল্য এনে দিতে পারবে। যা নারী-পুরুষের লিঙ্গজনিত বৈষম্য দূরীভূত করতে সক্ষম হবে।
শনিবার সকালে ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের উত্তর ছনুয়া গ্রামের নতুন বাড়ি থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। গৃহবধূ মর্জিনা আক্তার নিশি ওই বাড়ির দুবাই প্রবাসী ওমর ফারুক টিপুর স্ত্রী।
গৃহবধূর চাচা তাজুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কলহ চলছিল। শুক্রবার রাতেও তার স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে তর্ক-বিতর্ক হয়। রাতে একমাত্র ছেলের সঙ্গে ঘুমাতে যায় নিশি। সকালে ছেলের ঘুম ভাঙার পর মায়ের মরদেহ ঝুলে আছে দেখে আশপাশের লোকজনকে খবর দেয় সে। ৭/৮ বছর আগে বিয়ে হওয়া পারিবারিক কলহের জেরে নিশি আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করেছেন তার চাচা তাজুল ইসলাম। নারীর হত্যা-আত্মহত্যা নিয়ে সবসময়ই বেশ জলঘোলা হয়। এ আর নতুন কিছু নয়। তবে সমাজে যে পরিমাণে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে তাতে করে উপর্যুপরি ব্যবস্থা গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
সাংসারিক দ্বন্দ্ব-কলহ ঘটলে অনেক ক্ষেত্রে নারী সহজ সমাধান ভেবে আত্মহত্যা করে যা গুরুতর অন্যায়। তবে সমাজে এখন হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার একটা জোর চর্চা চলছে। এগুলো নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয়। মানবিকবোধ ও মনুষ্যত্বের অবক্ষয়। নারীর প্রতি সহিংসতা, হত্যার শিকারে পরিণত করতে এ সমাজ বেশ দক্ষ।
দুর্বৃত্তশ্রেণি, অসাধু শ্রেণির শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে তবেই এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। নারীকে সুস্থ জীবন দিতে হলে আগে নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। সহিংসতা কমাতে হলে তাই অপরাধ প্রমাণসহ কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে।