কেন বাতিল হলো হোচিমিনের সেশন
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যাল’ অনুষ্ঠানে শুক্রবার হোচিমিন ইসলামের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। তবে ট্রান্সজেন্ডার নারী যোগ দিতে পারবে না, এই নিয়ে ব্যাপক ঝড় উঠেছে। একটি ‘উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যালে’ একজন ট্রান্সজেন্ডার কেন বক্তব্য রাখবেন, এই নিয়েই তোপের মুখে হোচিমিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে হোচিমিনের সেশনটি বাতিল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে হোচিমিন নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মূল কারণ একজন ট্রান্সজেন্ডার কখনো নারী হতে পারেন না এবং তাকে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমকামিতার প্রচারণা চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ হোচিমিনের বিপক্ষে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। একইসঙ্গে অনলাইন ও অফলাইনে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী অনলাইনে অফলাইনে হুমকি দিতে থাকে এই অনুষ্ঠান হলে হোচিমিনকে ঢোকার আগেই ক্ষতি করা হবে অথবা অতিথিদের আটকে রাখবে। ইভেন্ট বন্ধ করে দেবে এমন হুমকিও দেওয়া হয়। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে।
তবে একটা সময় হোচিমিন নিজেই সেশন বাতিল করতে বাধ্য হন। তবে এমন কর্মকাণ্ডে হোচিমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ দেশের মানুষরা এ রকমই। এ দেশের মানুষের আচার-আচরণ, কথাবার্তা এ রকমই। এটা আমি বুঝে গেছি। দেশটা যখন স্বাধীন হয়, যিনি স্বাধীন করেছেন তাকেই মেরে ফেলা হয়েছে। এরপর তো আর এ জাতিকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।’
এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। প্রথমত সেশনটি ছিল উন্মুক্ত। সেখানে নারী কিংবা পুরুষ কে বা কারা এসেছে এই বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে না। সেশনটিতে পুরুষ ব্যক্তিও বক্তব্য রেখেছিল। এখানে হোচিমিনকে একজন বক্তা হিসেবে রাখা হয়েছে। তিনি নারী না পুরুষ, হিজড়া না ট্রান্সজেন্ডার; সেটা বিবেচনা করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এ ধরনের ঘটনা শুধু দুঃখজনকই নয়। পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত বলেও মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে এরূপ আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না। তারা মানুষকে মানুষ ভাবতে ভুলে গেছে। তাদের কাছে লিঙ্গবৈষম্যই বড় হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে এমন হুমকি আশা করা যায় না। শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অমর্যাদাপূর্ণ ও অসম্মানজনক। এরূপ আচরণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কাম্য হতে পারে না।