তারকাদের গোপনীয়তা ফাঁস ও রুচির বিকৃতি
সাধারণত অভিনয় ও খেলাধুলা জগতে যারা থাকেন, তাদের তারকা বলা হয়। তারকাদের ভক্ত থাকেন অনেক। তারকাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। কোন তারকা নতুন বাড়ি কিনেছেন, কোন তারকা বিয়ে করছেন, কোন হাসপাতালে কার বাচ্চা হয়েছে, এসব নিয়ে অহরহ চর্চা চলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্তরা তাদের পছন্দের তারকাকে অনুসরণ করেন। কিন্তু এর বাইরেও আরেকটি মাধ্যম খুব বড় প্রভাব ফেলে তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ্যে আনতে। তা হলো গণমাধ্যম।
গণমাধ্যম দেশের খবরাখবর জানাতে মূল ভূমিকা পালন করে। কিন্তু, কিছু মাধ্যম অধিক মুনাফার লোভে প্রকাশ্যে আনে তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন। প্রায়ই তারকাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। আর সেই আগুনে ঘি ঢালে গণমাধ্যম। চটকদার শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সমাজমাধ্যম ও গণমাধ্যমের হই-হই রব তোলা কতটা সঙ্গত?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে কারও ব্যক্তিগত বিষয় টেনে আনা শুধু অসঙ্গতই না, অনৈতিকও। যে কাজগুলো তারকারা সবার সামনে করেন না, সেগুলো গণমাধ্যম কেন প্রকাশ্যে আনবে? যেই কাজ তারা জনসম্মুখে করছে না, তার প্রতি জানার আগ্রহ কেন থাকবে? তারকারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে কী করছেন, তা অন্যদের দেখার বিষয় নয়। অনেক তারকাই আছেন, যারা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন। নিজের ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ্যে আনতে চান না। গণমাধ্যমগুলোকে কেন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ্যে আনতে হবে?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন তুলে আনার পেছনে নীচু ও বিকৃত মানসিকতাও দায়ী। তারকারা ‘পাবলিক ফিগার’ হতে পারেন, তবে ‘পাবলিক প্রপার্টি’ নন। এই কথা হয়তো গণমাধ্যমগুলো বেমালুম ভুলে যায়। তারকারাও মানুষ। আর প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে। তারকারা খ্যাতি অর্জন করেন তাদের পেশাগত কারণে। তাই কাজের বাইরে গিয়ে তাদের ব্যক্তিগত বিষয় অনুমতি ছাড়া প্রকাশ্যে আনা অপরাধ।
‘ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল’ বা ‘অমুকের গোপন ভিডিও ফাঁস’- গণমধ্যমের এসব শিরোনামে ছড়ানো সংবাদে তারকারা বিব্রত হন। প্রায় সব তারকাই এসবের মুখোমুখি হয়েছেন। কোনো তারকা তার সিনেমার প্রিমিয়ারে এলে সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীরা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে বসেন। অনেকে তো বডি শেমিংও করেন প্রশ্নের ছলে। কিন্তু এসব নীতিবিরুদ্ধ কাজ। গণমাধ্যমকর্মীদের নিজেদের সততা, নৈতিকতা আর আদর্শের জায়গায় থাকতে হবে। নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয় যেভাবে গোপন রাখা হয়, তারকাদের ব্যক্তিগত বিষয় গোপন রাখাও গণমাধ্যমের কর্তব্য। তাই কিছু লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের জন্য এসব চটকদার শিরোনামে সংবাদ প্রচার বন্ধ করা জরুরি।