বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে প্রথম নারী রেফারি
বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয়তার দিক থেকে শীর্ষে আছে ফুটবল খেলা। বাংলাদেশও দিন দিন ফুটবলে উন্নতি করছে। দেশেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ বিভাগ হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ। এবার চমক নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই ফুটবল মঞ্চে প্রথমবারের মতো নারী রেফারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি হলেন সালমা আক্তার।
কমলাপুরে শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ আর উত্তর বারিধারা ক্লাবের ম্যাচে সহকারী রেফারি হিসেবে ছিলেন সালমা আক্তার। এর মাধ্যমে ছেলেদের প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে এই প্রথম কোন নারী রেফারিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নেত্রকোনার মেয়ে সালমা আক্তার মনি। বাবা মো. শহর আলী আর মা রেখা আক্তার। এক ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সালমা সবার ছোট। ব্যবসায়িক বাবা ও গৃহিণী মায়ের ছোট সন্তান সালমা এখন আর শুধু নিজ পরিবারের গর্বই নন, গর্ব পুরো দেশের। স্কুল জীবনে খেলতেন অ্যাথলেটিকস, হ্যান্ডবল। অথচ ক্যারিয়ারের বড় অর্জন ফুটবলে। সালমা যখন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তখন অ্যাথলেটিকস শেষ করেই নেমে পড়তেন ফুটবল অনুশীলনে। আবার হ্যান্ডবলও খেলতেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের হয়ে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপও খেলেছেন। নেত্রকোনা আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন তিনি। ফিফার সহকারী রেফারি হওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনাও পুরোদমে চালিয়ে গেছেন সালমা।
লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল রেফারি হওয়ার জন্য যে পরিশ্রম করে গেছেন মনি তার পূর্ণতাও তো এসেছে। তবে তার এই পথি সহজ ছিলোনা। দীর্ঘ দিনের কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাস তাকে নিয়ে গেছে সামনের দিকে। ২০১৩ সালে বাফুফে নেত্রকোনায় ৭ দিনের একটা রেফারিং কোর্স করেছিল। ওই কোর্সে ছেলেদের সঙ্গে একমাত্র নারী ছিলেন সালমা আক্তার। তখন অনেকেই বাধা দিয়েছিলেন মনিকে। অভিযোগ ছিল তার নাকি বয়স কম ছিল রেফারিং কোর্সের জন্য। তারপরও থেমে যায়নি মনি। কোর্সে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়ে চমকে দেন সবাইকে। কোর্সের প্রতিটি ধাপ পার হয়ে ২০১৬ সালে জাতীয় রেফারি হন মনি। একসময় মনি রেফারি প্রশিক্ষণটা ছেড়েই দিয়েছিলেন নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে।
২০১৯ সালে জয়া চাকমার সঙ্গে ফিফা রেফারি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন সালমা ইসলাম মনি। কিন্তু বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে হতে পারেননি। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি পাশ করেন এবং নারী ফিফা রেফারি হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন। তখন তার বয়স ছিল ২৩ বছর। কিন্তু মূল রেফারি হতে বয়স লাগে ২৫ বছর। তাই সহকারী রেফারি হিসেবেই যোগদান করেন নারী ফিফাতে।
এবার তার স্বপ্নের আরেক ধাপ পূরণ হল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের রেফারি হতে পেরে। আশা করি সামনে আমরা আরো অনেক নারীকে এসব উচ্চ স্থানে দেখবো।