‘নারী নীতিমালায় এগিয়ে থাকলেও প্রয়োগ নেই’
নারী নীতিমালায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবার চাইতে এগিয়ে থাকলেও এসব ক্ষেত্রে বাস্তবিক প্রয়োগ না থাকায় ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইম্যান এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক। তিনি বলেন, কাগজে-কলমে নারীর সুরক্ষার জন্য আইন ও নীতিমালার দিক থেকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় সবার চাইতে এগিয়ে আছি, এটি আমাদের গর্বের জায়গা। কিন্তু এসব নীতিমালা ও আইনের বাস্তবিক প্রয়োগ প্রকৃতপক্ষে হচ্ছে না। এসব নীতিমালা স্থানীয় মোড়ল ও রাজনৈতিকরা নিজেদের কব্জা করে রেখেছেন। যা ফলশ্রুতিতে এর সঠিক প্রয়োগের ব্যত্যয় হচ্ছে। পাক্ষিক অনন্যার সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
ধর্ষণের কারণের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ধর্ষণের জন্য শুধুমাত্র দু’একটি কারণ দায়ী নয়, কারণ হিসেব করতে গেলে বহুমাত্রিক কারণ আমরা খুজে পাবো। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর জন্য তৈরী হওয়া নীতিমালা, গতানুগতিক চিন্তাধারা, দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বিচারহীনতা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, পর্ণোগ্রাফির ছড়াছড়ি ইত্যাদি প্রভাবক আমাদের ধর্ষণের কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তিনি বলেন, ধর্ষণের মতো ঘটনা এত বছর ধরে ‘র্যাপিটেডলি’ ঘটেছে। এর দায়ভার নিয়ে যাদের শাস্তি পাওয়া উচিত, যেভাবে শাস্তি পাওয়া উচিত তারা সেভাবে শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। ফলে মানুষের মাঝে ধর্ষণের পর শাস্তি ভীতি থাকে না। এর কারণে মানুষ ধর্ষণ থেকে বিমুখ না হয়ে ধর্ষণের প্রতি আরো বেশী ঝুঁকে পড়ে।
ধর্ষণের ঘটনায় মানুষ মুখ খুলছে জানিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, ধর্ষণের এমন ঘটনা আগে যে ঘটেনি এমন আমরা বলবো না, কিন্তু বর্তমানে গণমাধ্যমের সুবাদে আমরা ঘটনাগুলো জানতে পারছি। মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কিন্তু চলতি সময়ে উদ্বেগজনক হারে ঘটনাগুলো ঘটছে।
ধর্ষণের ঘটনা যখন ঘটে তখন আশেপাশের মানুষ তা প্রতিহত করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, মানুষ চাইলে প্রতিহত করতে পারে কিন্তু তারা মনে করে এ ধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পুলিশি ঝামেলায় কেউ পড়তে চায় না। যার কারণে আশেপাশের মানুষজন বাধা দিতে পারেনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব ধরনের আইন আছে। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। রাজনৈতিক প্রভাব, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে এসব আইনের প্রয়োগ সম্ভব হয়না।