Skip to content

২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদ আয়োজনে ফ্যাশন হাউজগুলোর তোরজোড়

রোজার শুরুতেই তরুণদের মানসপটে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা। ওই পরিকল্পনায় দরজিবাড়ির বদলে ফ্যাশন হাউজগুলোর প্রতি নজরটা থাকে বেশি। সাশ্রয়ী মূল্যে হালফ্যাশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফ্যাশন হাউজগুলো বরাবরই চমক দেখিয়ে চলে। এবারও ফ্যাশন হাউজগুলো চালিয়ে গেছে তোরজোড়। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফ্যাশন হাউজের তরুণদের ঈদ আয়োজনের দিকে একবার ফিরে দেখা যাক। কেমন হচ্ছে তাদের ইদের চলতিধারা?

কে ক্র্যাফট

উৎসব ভিত্তিক স্বাচ্ছন্দ্যের পোশাক তৈরিতে কে ক্র্যাফট বরাবরই প্রশংসা কুড়িয়ে চলেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা রঙের ফেব্রিক ও স্টাইলিং-এ মোটিফের ব্যবহার ইতোমধ্যে তরুণদের আকর্ষিত করে চলেছে। তাদের আয়োজনে রয়েছে ট্র্যাডিশনাল ক্ল্যাসিক, রেট্রো, ফিউশন, এ লাইন, আংরাখা, বক্স প্লিটেড সহ বৈচিত্রময় নানা প্যাটার্নের সালোয়ার কামিজ, ডাবল লেয়ারড সালোয়ার কামিজ, লং-কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস, ডাবল লেয়ারড কুর্তি, টিউনিক, শ্রাগ,কাফটান,প্যান্ট সহ টপস, টপস-স্কার্ট। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে শাড়ির বৈচিত্র্যপূর্ণ ডিজাইনের একটি বড় আয়োজন থাকছে। নিজস্ব ডিজাইনে মোটিফের ব্যবহার, কালার কম্বিনেশন এবং ভ্যালু অ্যাডিশনে নানা মিডিয়ার ব্যবহার তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। ছেলেদের জন্য রয়েছে রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, কটি, স্মার্ট ক্যাজুয়াল শার্ট, এথনিক শার্ট, ফতুয়া ও পলো শার্ট। মেয়ে শিশুদের জন্য উৎসব ভিত্তিক পোশাকে থাকছে – সালওয়ার কামিজ, ফ্রক, কুর্তি, টপস, পাফি পার্টি ড্রেস, লেহেঙ্গা সেট। ছেলে শিশুদের জন্য পাঞ্জাবী, শার্ট, কটি, শেরওয়ানি সহ নানা আয়োজন। শিশুদের পোশাকে প্যাটার্ন, ফ্যাব্রিক এবং রঙের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্যাটার্নে ভিন্নতা এবং রঙে উৎসবের আমেজ বহন করবে। অরনামেন্টেড ফ্লোরাল, প্লামেরিয়া, মাড আর্ট, ওয়াটার লিলি, বেসিক রান স্টিচ, ডট ম্যান্ডালা, কাতান,আলাম, মুঘল আর্চ, কাশ্মীরি মোটিফের অনুপ্রেরণায় এবারের বিভিন্ন সিরিজের পোশাক। এছাড়াও জ্যামিতিক, ফ্লোরাল, ট্র্যাডিশনাল, জামদানি, কাঁথা স্টিচ, ট্রাইবাল, ট্র্যাডিশনাল পেইসলে, এথনিক, তাগা, ম্যান্ডালা, মিক্সড, গ্রীক আর্চ, এরাবিক, টার্কিশ আর্ট, ইসলামিক মোটিফে তৈরি হয়েছে এবারের পোশাক। পরিবেশ ও আবহাওয়ার সাথে সাথে আরামদায়ক বিষয়টি মাথায় রেখে ফেব্রিকে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কটন, ডিজাইন্ড কটন, সুইস কটন, হ্যান্ডলুম কটন, চিনিগুড়া কটন, লিনেন, টিস্যু, জর্জেট, সিল্ক, ধুপিয়ান সিল্ক,হাফ সিল্ক, সামু সিল্ক, মম সিল্ক, ক্রিস্টাল সিল্ক, পেপার সিল্ক, মসলিন, কোটা মসলিন, টু-টোন, সাটিন,অরগাঞ্জা। পোশাকগুলোতে নকশা ফুটিয়ে তুলতে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি,কারচুপি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, সিকুইন ওয়ার্ক, ডিজিটাল প্রিন্ট এবং টাই-ডাই মিডিয়ার ব্যবহার হয়েছে। রঙ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মেরুন, রেড, ক্রিমসন রেড, পেস্ট, ব্ল্যাক, টারকুইস,নেভি,অরেঞ্জ, বার্ন অরেঞ্জ, পিচ, লাইট পিঙ্ক, অ্যাশ, অলিভ, গ্রিন,অ্যাকুয়া গ্রিন, ভায়োলেট, ল্যাভেন্ডার, ব্রাউন, অফ- হওয়াইট, ইন্ডিগো, ম্যাজেন্টা,মাস্টার্ড ইয়েলো সহ নানান রঙ । কে ক্রাফটের সিনিয়র ডিজাইনার শরীফুল হুদা বিপ্লব জানান, এ বছর ফ্লোরালটি বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এই পোশাক কিছুটা ওয়েস্টার্ন কাটের সঙ্গে মানানসই এবং দেশিয় ঢঙের পোশাক এই দুইয়ের ফিউশন করানো যায়। তাছাড়া গরমের কথা মাথায় রেখেও অনেকে ফ্লোরালের দিকে ঝুঁকছে। তরুণীদের কাছে ইতোমধ্যে ওয়াটার কালার, পেস্ট, হালকা গ্রিনের ফেব্রিক জনপ্রিয়তা পাচেই। এছাড়া হালকা আকাশী শেড, প্যাস্টেল শ্যাড, গোলাপি শেডের জামাও তরুণদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
গরমের কথা ভেবেই আরামদায়ক ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়েছে। এ বছর তরুণরা ভিজকজ বা ব্লেডেড গ্লসি ফেব্রিকের পোশাক বেছে নেওয়ার পাশাপাশি গ্রীষ্মের ভাব আছে এমন উজ্জ্বল রঙের দিকে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। বছরটা যেন ফ্লোরালের হয়ে গেছে। ফ্লেয়ারড বা কুচি দেয়া পোশাক ইতোমধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। তরুণদের জন্য ভিন্নধর্মী কালেকশন বাদেও রেগুলার প্যান্ট টপ, সিঙ্গেল পিস ও কুর্তির কালেকশন সারা প্রতিবারের মতোই রেখেছে। তবে এসব পোশাকে কাটিং ও প্যাটার্নে কিছুটা বদল আনা হয়েছে।

ক্লাবহাউজ

ঈদ আয়োজনে পিছিয়ে নেই ক্লাবহাউজ। তারা ইতোমধ্যে চারটি লাইনে ফ্লোরাল কালেকশন শোকেস করছে যা তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সামার ঈদ কালেকশন বাজারে থাকলেও এক্সক্লুসিভ কালেকশন এখনও আসেনি। আগামী কয়েক সপ্তাহেই তারা এক্সক্লুসিভ কালেকশন নিয়ে আসবে। এক্সক্লুসিভ কালেকশনে কাতান ফেব্রিকের সালোয়ার কামিজ যুক্ত হয়েছে। এই ফেব্রিককে কনট্রাস্ট হিসেবে ব্যবহার করে অন্য ম্যাটারিয়াল যেমন ভেলভেটের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে।
তরুণদের কথা মাথায় রেখে হোয়াইট-গোল্ডেন-সিলভার কালেকশনের আয়োজন করা হয়েছে। সাদা কাপড়ের ওপর সোনালী বা সিলভারের এমব্লিশম্যান্ট করে পোশাক বানানো হয়েছে। তরুণদের রুচির সঙ্গে মিল রেখেই তারা এই কালেকশনটি সাজিয়েছে। ওয়েস্টার্ন পোশাকের ক্ষেত্রে সমুদ্রের জগতকে থিমে রেখে একটি একুয়া কালেকশন রাখা হয়েছে। কালেকশনটিতে শার্ট ও টপ রাখা হয়েছে এবং মোটিফ হিসেবে সামুদ্রিক প্রাণী ও সমুদ্রের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ট্রপিক্যাল ফ্লোরাল ও বার্ড মূলত তরুণদের জন্য বিশেষায়িত পোশাক। চলতি বছর ক্রেতারা নির্দিষ্ট কোনো ডিজাইনকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের আরামকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। নারীরা একটু লুজ ফিট পোশাকের দিকেই বেশি ঝুকছে। হালফ্যাশনে এবার কমফোর্ট চলছে বলে জানান ইফতেখার। বাচ্চাদের পোশাকের ক্ষেত্রে ক্যাপসুল কালেকশনের মধ্যে বৈশাখকেও কিছুটা টাচ করা হয়েছে। ইদের মধ্যেই বৈশাখ আসবে বলে একটি আলাদা কালেকশন করা হয়েছে যার অনুপ্রেরণা মাছ। ইলিশ মাছের আকৃতিকে রেট্রো রঙ দিয়ে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

রঙ

প্রতিবছরের মতোই রঙ এবারও একটি নির্দিষ্ট রঙ বেছে নিয়েছে। চলতি বছর পাখির রঙকে থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে ফ্যাশন হাউজটি। পোশাকের রঙের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ঠাঁই পেয়েছে এবং নকশার ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আবহ গুরুত্ব পেয়েছে। এক্ষেত্রে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, কাটিং অ্যান্ড সুইং করা হয়েছে। পোশাক ডিজাইনে কটন, স্লাব কটন, লিনেন, হাফসিল্ক, জর্জেট, নেট, টিস্যু, সিকুয়েন্স ও কাইজার ফেব্রিকে পোশাক করা হয়েছে যা তরুণদের জন্য আরামদায়ক হবে। তরুণদের কথা মাথায় রেখে রঙের বিবেচনাও করতে হয়েছে। এ বছর সাদা, কালো, মেজেন্টা, লাইট ব্লু, পেস্ট, অলিভ, কফি, মাস্টার্ড, মন্ড, সী গ্রিন, ব্রাউন রঙের পোশাক তরুণদের আকর্ষণ করছে বেশি।

লা রিভ

করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক দুর্যোগের পর এই বছরটাতে উৎসবমুখর একটি আয়োজনের লগ্নে লা রিভের শোরুমে রঙের সাজ। তরুণদের এ বছরের কালেকশনের মূল রঙই কমলা। আর পরিপূরক রঙ ল্যাভেন্ডার বা পিংক। মূলত বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙ যেমন লেমন, ধূসর, হলুদ, উজ্জ্বল নীল (নীলের অনেকগুলো শেড) ব্যবহৃত হয়েছে। গরমের কথা বিবেচনায় ফেব্রিক হিসেবে ব্যবহার হয়েছে কটন, সূতি। এছাড়া দামি পোশাকের ক্ষেত্রে মসলিন, টেনসিল ব্যবহার করা হয়েছে। কাটের ক্ষেত্রে এ বছর সাদামাটা ও স্ট্রেইটকাটের দিকে মনোযোগ বেশি। তরুণরা এদিকেই বেশি ঝুকছে। গত বছরের মতো এসিমেট্রিক হেয়ারলাইন পোশাকে নেই। নরমাল কামিজ, ফ্রক স্টাইল, লং কামিজ, প্রচুর এসেছে। স্লিভের ক্ষেত্রে গত বছর রাফলসের উপর প্রচুর কাজ করা হয়েছিল। এ বছর স্ট্রেইট ও প্লেইন স্লিভই আসছে। এ বছর সিম্পলই সবচেয়ে বড় ট্রেন্ড। পোশাকে গ্রাফিক্সের ক্ষেত্রে জ্যামিতিক মোটিফ, ফুল ও লতাপাতা প্রিন্টে আনা হয়েছে। ফ্লোরাল প্রিন্টের ক্ষেত্রে লাইন লাইন রয়েছে যা ইতোমধ্যে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তরুণদের জন্য পিংক কালেকশন করা হয়েছে। এটা একটু ভিন্নভাবেই করা হয়েছে।

সারা

সারার এ বছরের মেয়েদের কালেকশনে থাকছে কুর্তি, সিঙ্গেল থ্রি-পিস, কামিজ, ফ্যাশন টপস, লন থ্রি-পিস, কাফতান, ক্যাজুয়াল শার্ট। আর ছেলেদের এবারের কালেকশনে রয়েছে পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, ফতুয়া, পোলো, টি-শার্টসহ বিভিন্ন আয়োজন। এ ছাড়া ‘সারা’র কিডস কালেকশনে মেয়েদের জন্য থাকছে ফ্রক, টপস, কুর্তি ও থ্রি-পিস। আর বয়েজ কালেকশনে থাকছে পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, শার্ট ও প্যান্ট।

ইয়েলো

কদিন আগেই ইয়েলো ৫০% ছাড়ে তাদের পণ্য বিক্রির আয়োজন করেছিল। তখন তরুণদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এবার তাদের ঈদ আয়োজনে সিম্পল ডিজাইনের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া রিসাইকেল কাপড়ে উৎপন্ন ব্র্যান্ড রি/ড্রেসের কিছু কালেকশন রয়েছে যা ইতোমধ্যে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইয়েলো আউটলেটে খুব দ্রুতই তাদের নতুন কালেকশন আসবে।

ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের তোরজোড় শুরু করে দিয়েছে। ব্র্যান্ডে নজর ক্রেতাদের। বিশেষত তরুণদের ভরসা সেই ফ্যাশন হাউজেই। তাদের এবারের আয়োজনে ফ্লোরালই জনপ্রিয়তায়। এ বছরের হালফ্যাশনে ফ্লোরাল মুগ্ধতায় তরুণ প্রজন্ম।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ