ব্যাচেলর স্বামী
ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম একটা জব নিয়েছিলাম। যাতে নিজের খরচ-পাতি নিজেই চালাতে পারি। ছোটবেলা থেকেই আমার এ মনটা একটু স্বাধীনচেতা। চাকরিটা করেও পড়াশোনা দিব্যি চালিয়ে নিচ্ছিলাম। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হতো। ভালোই লাগতো আমার। আমাদের দেশে তখন সদ্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমার কাছে তখনো মোবাইল ফোন ছিল স্বপ্নের মত একটা ব্যাপার। একদিন সেটি সত্যি করে ফেললাম। নিজের রোজগারের টাকায় একটা ভিডিও ফোন কিনে। তখনকার দিনে নিজের কাছে এমন একটা মোবাইল ফোন থাকা সত্যিই অন্যরকম একটা ব্যাপার ছিল। কলরেট ছিল খুব বেশী তাই কথা বলার চেয়ে মেমরিতে লোড করে গান শুনতাম বেশী। তখনকার সময়গুলো বেশ কেটে যাচ্ছিল। আস্তে আস্তে মোবাইল ফোন সহজলভ্য হয়ে ওঠে। কলরেটও অনেক কমে আসে। সবার হাতে হাতে চলে আসে মোবাইল ফোন। নিত্যদিনের একটি অতি দরকারি যন্ত্রে পরিণত হয় এই মোবাইল ফোন। আগের চেয়ে মানুষ অনেক বেশী ফোনে কথা বলে।
আমার ফোনটাতে একদিন একটা কল আসলো। অপরিচিত এক নম্বর থেকে। কথা শুরু করলাম। মেয়ে মানুষের গলা,
– হ্যালো। কে বলছেন?
– কি বলছো? তুমি আমাকে চিনতে পারছো না।
– না। কে আপনি?
– তোমার কি হয়েছে বলোতো? আমাকে চিনতে পারছো না? আমি রুমা তোমার বউ। স্বামী-স্ত্রী মধ্যে কি কখনো কোন ঝগড়াঝাঁটি হয়না? তাই বলে একেবারে ভুলে যেতে হবে?
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। ঐ মহিলা বলে কি? আমি বিয়েই করলাম না অথচ কারো স্বামী হয়ে গেলাম। অনেক কথা বলে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম তবুও সে বুঝলো না। রাগ করে ফোন কেটে দিলাম। তবুও বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছিল। বিরক্ত হয়ে ফোন বন্ধ রাখলাম। ব্যাপারটা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম। ওরা এ নিয়ে খুব হাসাহাসি করলো।
পরদিন ফোন চালু করলাম। ফোন চালু হতেই ঐ নম্বর থেকে আবার ফোন এলো। কেটে দিলাম। তবুও বারবার ফোন আসতে লাগলো। বাধ্য হয়ে ফোন রিসিভ করলাম। আমি হ্যালো বলাতেই ওপাশ থেকে একজন বয়স্ক মহিলা বলতে লাগলেন,
– বাবা আমি তোমার শ্বাশুড়ি বলছি। শোনো স্বামী স্ত্রীর মাঝে ওরকম একটু-আধটু ঝগড়াঝাঁটি, ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে তাই বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে?
– আমি আপনার মেয়ের জামাই নই। আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। নম্বর ঠিক করে ফোন দেন। রং নাম্বারে ফোন করেছেন।
তিনি আমার কথাগুলোর বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করলেন না। আগের ন্যায় অনর্গল বলে চললেন-
– দেখো বাবা মারুফ, আমাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। ছোট্ট বাচ্চাটার কথা তো একটু ভাববে। সারাক্ষণ আব্বু আব্বু বলে কান্নাকাটি করছে। আর আমার মেয়েটার দিকে তো তাকানো যাচ্ছে না। এত রাগ ভালো না। বাড়িতে ফিরে এসো বাবা। আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন হবেনা। বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত ফিরে এসো বাবা।
আমি তাকে আবার বললাম, আমি আপনার জামাই মারুফ নই আর আমার কোন বউ বাচ্চাও নাই। অবিবাহিত মানুষ আমি। আমি সত্যি বলছি। আপনাদের ভুল হচ্ছে। তিনি অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে তিনি ফোন কেটে দিলেন। এভাবে আরো দিন পনেরো নকল বউ আর শ্বাশুড়ির ফোনের তিব্র জ্বালাতন সহ্য করতে হলো। রোজ পালা করে দু’জন ফোন করতো। আমি সব সময়ই তাদের বুঝাতে ব্যর্থ হতাম। কখনোই ওরা আমার কথা বুঝতেই পারতো না। অবশেষে একদিন মুক্তি মিললো। হঠাৎ একদিন ফোন আসা বন্ধ হলো। হয়তো সে তার আসল স্বামীকে খুঁজে পেয়েছে। আমি এখন আর কারো স্বামী নয় শুধু একজন ব্যাচেলর মাত্র।