৭৫ তম বসন্তে আসাদুজ্জামান নূর
লাল টিশার্ট, কালো রঙের জ্যাকেট আর হাতে একটা চেইন হাওয়া মে উড়তা যায়ের তালে তালে ঘুরাতে ঘুরাতে একজন যুবক সারা এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চোখের সামনে একটা চরিত্রই ভেসে উঠছে নিশ্চয়ই। যার ফাঁসি বাতিলের দাবিতে ভক্তকুল মিছিল করেছিলো। তিনি আর কেউ নন, সবার প্রিয় বাকের ভাই। আমাদের গুণী অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। জীবনের ৭৪ টি বসন্ত পেরিয়ে আজ ৭৫ এ পা দিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
জন্মসূত্রে আসাদুজ্জামান নূর পশ্চিমবঙ্গের। ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে তাঁর জন্ম। তবে জন্মের দুই বছরের মাথায় ১৯৪৮ সালে পরিবারের সঙ্গে এই বাংলার নীলফামারীতে চলে আসেন।
ছাত্রাবস্থায় তিনি জড়িয়ে পড়েন বাম রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সব আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জনপ্রিয়তা অভিনেতা হিসেবে হলেও এই জীবন্ত কিংবদন্তির সবথেকে বড় পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন তিনি। এরপরে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও অংশ নেয়। হিসেব মতে অভিনয়ের থেকে রাজনীতির জীবনেই তাঁর অধিক পদচারণা। রাজনীতি করতে করতেই থিয়েটার, আবৃত্তি এসব দিয়ে সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গণে জড়িয়ে পড়েন। হুমায়ুন আহমেদের পরিচালিত নাটক 'এইসব দিনরাত্রি', 'অয়োময়' এ অভিনয় জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন 'কোথাও কেউ নেই' এর বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে।
অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিটাকেও ধরে রেখে সমানতালে এই কিংবদন্তি। বর্তমানে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই গুণী অভিনেতার শৈশব কৈশোর কেটেছে নীলফামারীতে। জীবনের ৭৫ তম বসন্তে এসে এই রাজনীতির নেতা এবং অভিনেতার অর্জনের পাল্লাটাও বেশ ভারী। স্বাধীনতা পদক, মন্ত্রিত্ব জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী হিসেবে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা সবই পেয়েছেন। তবে সব থেকে বড় পাওয়া এই কিংবদন্তির কাছে এতবছরে আরো বহু কিংবদন্তির সান্নিধ্য পেয়েছেন। আজ এই কিংবদন্তির জন্মদিনে তাঁর জন্য রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।