স্নাতকপাশ তরুণী এবার ডোমের চাকরিতে!
মর্গে গিয়েছেন কখনো? এ যেন এক ছিমেছিমে পরিবেশ যেখানে ফ্রিজারে রাখা থাকে শত শত লাশ। এমন পরিবেশে স্বাভাবিক মানুষের অবস্থান করা অনেকটা কঠিন।তবে এসকল লাশ যারা কাটা ছেড়া কিংবা এই কাজের সাথে জড়িত তারা নিঃসন্দেহে অধিক সাহসী।এই পেশার মানুষদের ডোম বলে।
তবে নারী হলে যেন এই পেশায় বড্ড বেমানান। কারণ নারী বলতে আমরা বুঝি ধরাবাঁধা নিয়মের রাস্তায় চলা এক জীবন। তথাকথিত সমাজের সহজ সাবলীল প্রতিমা। কিন্তু সম্প্রতি ডোমের চাকরিতে আবেদন করেছেন অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া এক ভারতীয় নারী। তবে প্রথম শ্রেণির স্নাতক হয়ে ডোম পদের চাকরিপ্রার্থী হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে গেছে।
স্বর্ণালী সামন্ত তিনি হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা। শিবপুরের ভবানী গার্লস স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হন। বর্তমানে তিনি ডালহৌসির একটি বেসরকারি সংস্থার রিসেপশনিস্ট হিসাবে চাকরি করছেন।তাঁর এক মেয়ে রয়েছে। ইতিহাসে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলেন স্বর্ণালী। তারপরও ডোম পদে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছেন তিনি। পদের নাম ল্যাব অ্যাটেনড্যান্ট বা পরীক্ষাগার সহকারী। এনআরএস হাসপাতাল গত বছর ডিসেম্বর মাসে এই পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয়।
ফেসবুকের মাধ্যমে এনআরএসের বিজ্ঞাপনটা দেখতে পান তিনি। তারপর আবেদন করেন। গত ২১ মার্চ পরীক্ষা ছিল। তবে সেই পরীক্ষা পিছিয়ে যায় আগস্টে।
সম্প্রতি তার এমন আবেদন নিয়ে নেট দুনিয়ায় হট্টগোল শুরু হয়। নেটিজেনদের মাঝে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।এই বিষয়টি অবাক তিনি।
স্বর্ণালীর ভাষ্যে, "যাদের চাকরি নেই, তাদের তো চাকরি দরকার। তা সে যে পদই হোক না কেন। কাজের কোন ছোট বড় হয় না"।
তবে এতদিন পর বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ার কি ব্যাখ্যা তার জানা নেই। তিনি জানান, 'প্রথমে ‘পরীক্ষাগার সহকারী’ বিষয়টি না জানলেও, কিছুটা খোঁজখবর নিতেই ওই পদ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়'।
চাকরি পেলে কাজ করবেন নাহ এমন চিন্তা তিনি কখনোই করেন নি। ডোমের পদে কাজ জেনেই আমি পরীক্ষা দিতে গিয়েছেন। কোন রকম খ্যাতির লোভে পরীক্ষা দেননি। তার বাড়ির লোকও এটা মেনে নেবে।
জানা গেছে, স্বর্ণালীর স্বামী দেবব্রত কর্মকার একটি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থায় গাড়ি চালান। এনআরএস-এর ওই পরীক্ষায় শুধু স্বর্ণালীই নন। হাসপাতাল সূত্রে খবর পাওয়া যায় স্নাতক ছাড়াও স্নাতকোত্তররাও আবেদন করেছেন ওই পদে। আবেদন করেছেন ইঞ্জিনিয়াররাও।
পেশার ক্ষেত্রে কোন কাজই ছোট নয়। নারীর পেশাও তেমনি গন্ডিবদ্ধ ধরাবাঁধা নয়। শুধু প্রয়োজন সম্মানবোধ ৷ কাজ কে লজ্জা পেলে সে কখনোই এগোতে পারে নাহ। কাজ ছোট হোক কিংবা বড় সম্পূর্ণ সম্মানবোধ বজায় রাখা গেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। সেই কাজটি এই করে দেখিয়েছেন স্বর্ণালী।