বর্ষায় নিন চুলের যত্ন
বাদলের প্রথম ফোটা কদম কিংবা এক পশলা বৃষ্টিতে মন ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য বর্ষা অনেকের প্রিয় ঋতু। কিন্তু এই বর্ষায় নানা বিষয় নিয়েই পড়তে হয় বিপাকে। এই যেমন ধরুন চুল। শ্রাবণের ধারা যখন তখন এসে ভিজিয়ে দিয়ে যেতে পার এই বর্ষার মৌসুমে। সেটা সুন্দর চুলগুলোর জন্য মোটেও সুখকর নয়।
বৃষ্টির পানি ময়লা ও এসিডে মিশ্রিত থাকে বলে এটি যখন চুলে লাগে তখন মাথার স্কাল্পে চুলকানি সহ খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। আর এমন সময় নিয়মিত চুলের যত্ন নিতে হবে। প্রয়োজনে বৃষ্টিতে বাইরে গেলে চুল ভিজে গেলে বাসায় ফিরেই ধুয়ে ফেলুন।
ভালো করে চুল ধোয়া
বৃষ্টির পানি চুলের জন্য ক্ষতিকর কারণ বৃষ্টির পানিতে এসিড (Acid) আর প্রচুর ময়লা থাকে। যা স্কাল্পে (scalp) চুলকানি সহ খুশকির সৃষ্টি করে। যেহেতু বর্ষাকালে যখন তখন বৃষ্টি পড়ে হঠাৎ করে ভিজে যেতেই পারেন তাই বাইরে থেকে এসে সাথে সাথে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন।
ভেজা চুল আঁচড়াবেন না
বর্ষা ঋতুতেই চুল পড়ে বেশি। খেয়াল করে দেখবেন সাধারণত বছরের অন্যান্য সময় চুল আঁচড়ালে ৭০ থেকে ১০০ টি চুল স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন ঝরে যায়। কিন্তু এই ঋতুতে চুল পড়ার সংখ্যা প্রতিদিন ২০০ টিরও বেশি হয়। তাই ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। চুল খুব দ্রুত শুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন আর মোটা ফাকা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন। কখনোই অন্যের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন না অথবা নিজের চিরুনি কাউকে ব্যবহার করতে দিবেন না, এতে ব্যাকটেরিয়া (Bacteria) সংক্রমিত হয়ে স্কাল্পে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে।
ওয়েল ম্যাসাজ
যদি খুশকি আপনার স্কাল্পে আক্রমণ করেই ফেলে তাহলে অবশ্যই আন্টি ড্যানড্রাফ (Anti dandruff) শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন কিন্তু যেহেতু এই ধরনের শ্যাম্পু খুব স্ট্রং (strong) হয় তাই চুল ধোয়ার ২ ঘণ্টা পূর্বে আপনার পছন্দের যে কোনও তেল স্কাল্প থেকে শুরু করে চুলের আগা পর্যন্ত ম্যাসাজ করে নিবেন। কিন্তু কখনোই সারারাত চুলে তেল দিয়ে রাখবেন না। কারণ এই সিজনে স্কাল্প ময়েশ্চারাইজার (Moisturizer) গ্রহণ করতে পারেনা বরং আরো ফিরিয়ে দেয় যা চুলের গোঁড়া নরম করে দেয়।
মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার
বর্ষাকালে স্কাল্প অতিরিক্ত তৈলাক্ত থাকে তাই চুলকে হেলদি (Healthy) রাখতে সপ্তাহে ৪-৫ দিন চুল কোন মাইল্ড শ্যাম্পু (Mild shampoo) দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। স্কাল্পের তেল চুলের গোঁড়া নরম করে দেয়। এর ফলে চুল পড়ে যাওয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
কোন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন না
প্রাকৃতিক ভাবে যেহেতু স্কাল্প একা একাই তৈলাক্ত হয় তাই চুলে আলাদা কোন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার খুশকির সৃষ্টি করে।
ঘরোয়া কন্ডিশনার ব্যবহার
শ্যাম্পু করার পর চুলকে অবশ্যই প্রাকৃতিক ভাবে কন্ডিশনিং করবেন। খুব সহজ পদ্ধতি হল ৫০০ মিলি পানির সাথে ২ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে শ্যাম্পু করার পরপরই ধুয়ে ফেলবেন। ভিনেগার দেয়ার পর চুল আলাদা করে পানি দিয়ে ধোয়ার দরকার নেই। অবশ্যই কেমিক্যাল কন্ডিশনার (Conditioner) ব্যবহার কম করবেন কারণ এই ঋতুতে এটা চুলের অনেক ক্ষতি করবে।
স্টাইলিং করা বন্ধ রাখুন
এই সিজনে চুল পড়া কমাতে চুলে যে কোন স্টাইলিং (styling) করা বন্ধ রাখুন। এই সময়টাতে আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে খুব সহজে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে তাই চুলে যে কোন কেমিকেল (Chemicals) প্রোডাক্ট বা হিট সহ্য করার ক্ষমতা কম থাকে।
কোন ধরনের মেশিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে
বর্ষাকালে চুলের যত্ন করতে হেয়ার ড্রায়ার (Hair dryer) ব্যবহার করা ঠিক না। হেয়ার ড্রায়ার (Hair dryer) দিয়ে চুল শুকানো অথবা চুল স্ট্রেইটনার (straightener)/কার্ল (Carl) করার মেশিন (Machine) ব্যবহার করবেন না। কোন প্রকার হেয়ার স্প্রের (hair spray) ব্যবহার কমিয়ে দিন। বরং চুলকে তার ন্যাচারাল নিয়মে বাড়তে দিন। বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতাকে নিত্যসঙ্গী করে নিন আর যারা রেইন কোট ব্যবহারে অভ্যস্ত তারাও নিয়মিত সঙ্গী করে নিন এটাকে আপনার পরম বন্ধু হিসেবে।
প্রাকৃতিক নিয়মে চুলে উজ্জ্বলতা বাড়ান
প্রাকৃতিক নিয়মে চুলে উজ্জ্বলতা বাড়াতে চাইলে মেথি বেঁটে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে শুধু পানিটা ছেঁকে নিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে খুব সহজ একটি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। একটি কলা আর সাথে কয়েক চামচ এভোক্যাডো (Avocado) একসাথে মিশিয়ে চুলে ৩০ মিনিট দিয়ে রেখে পরে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল খুব ঝরঝরে থাকবে স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়াতেও।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
সবশেষে খাবার অভ্যাস নিয়ে বলবো। সব ধরনের জাঙ্ক ফুড/ অয়েলি ফুড খাওয়া যাবেনা এটা তো জানা কথাই। কিন্তু যে অভ্যাস গুলো করতে করতে হবে তা হল বেশি করে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। আমলা বেঁটে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পরিষ্কার পানি ছেঁকে পান করতে পারলে চুলের গোঁড়া মজবুত হবে। ফল এবং কাঁচা সবজির সালাদ বেশি করে খেতে পারলে চুলের গ্রোথ (growth) ভালো হবে। সর্বশেষ পানি পান করুন যত বেশি সম্ভব হয় তত।
আশা করি টিপসগুলো কাজে আসবে আপনাদের বর্ষাস্নাত দৈনন্দিন জীবনে। বৃষ্টি উপভোগ করুন সাথে নিজের যত্ন করতে ভুলবেন না যেন।