Skip to content

জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৪ সালের আজকের দিনেই মৃত্যুবরণ করেন জাহানারা ইমাম। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ৮টায় নির্মূল কমিটির মহানগরের নেতারা মিরপুরে তাঁর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। আজ বিকেল ৩টায় শহীদ জননীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি' এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে। 

 

১৯২৯ সালের ৩ মে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। অত্যন্ত রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও তাঁর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বাবা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন অত্যন্ত আধুনিক মনস্ক। 

বাবার আগ্রহেই পড়াশোনায় হাতেখড়ি তাঁর। এরপর মা সৈয়দা হামিদা বেগমের সহজাত মমতা এবং সাহচর্যে তিনি মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোন ১৯৪২ সালে। রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ তিনি চলে আসেন কলকাতায়। 

প্রবেশ করেন। চলার পথের অনুপ্রেরণা হয়ে পাশে থাকেন তাঁর স্বামী শরিফুল আলম ইমাম। 

তিনি শিশু সন্তান রুমীকে সামলে ১৯৬৪ সালে ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়, অর্জন করেন 'সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন' ডিগ্রি। এরপর ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র যান। 

 

সংসার জীবনের পাশাপাশি তিনি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনেও জড়িয়ে পড়েন। তিনি বায়োন্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনের, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যেকটিতেই রেখেছেন অসামান্য অবদান৷ তিনি শুধু একজন বীরমাতা- ই নন, হয়ে উঠেন গেরিলাদের সহযোদ্ধা। দেশের মুক্তির লড়াইয়ে তিনি তাঁর প্রিয় সন্তানকে কোরবানি দিয়ে, জীবন সঙ্গীকে হারিয়েও শোকে  ভেঙ্গে পড়েননি। শোককে শক্তিতে পরিণত করে তিনি আবারো যুদ্ধে নামেন তিনি। 

১৯৯১ এর ২৯ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে জামায়াতের আমীর ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে ১৯ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে ১০১ সদস্যের ঘাতক নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪ টি ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক, নারী, শ্রমিক, কৃষক ও সাংস্কৃতিক জোট সহ মোট ৭০ টি সংগঠনের সমন্বয়ে ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের নরঘাতক নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটিতে তিনি সর্বসম্মতিতে আহ্বায়ক হন।     

এই নির্ভীক সাহসী মহীয়সী নারী তাঁর অসাধারণ বর্ণিল জীবনে পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার, কমর মুশতরী সাহিত্য পুরস্কার, নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা, স্বাধীনতা পদক, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, রোকেয়া পদক ইত্যাদি।

১৯৯৪ সালের জুনের ছাব্বিশ তারিখে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই মহীয়সী নারী। মুক্তিযুদ্ধের আটজন সেক্টর কমান্ডার এ বীর জননীকে 'গার্ড অব অনার' প্রদান করেন। কিন্তু নক্ষত্রের মৃত্যু নেই তাই এ মহীয়সী নারী আজীবন  বেঁচে থাকবেন  তাঁর কর্মে।