Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীকে বাঁচতে দাও

বর্তমান সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে নারীরা নানাবিধ প্রতিবন্ধকতাকে ডিঙিয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছেন। প্রতিযোগিতার দৌড়ে নিজেদের সমানতালে এগিয়ে নিতে শিক্ষা গ্রহণ করে যোগ্যতা বলে চাকরিও করছেন অনেক নারী। কিন্তু শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করেও নারীর প্রকৃত মুক্তি কি সম্ভব হচ্ছে! সমাজ পর্যবেক্ষণ করলে এটাই উঠে আসে যে, শিক্ষিত নারীরা এ সমাজে আরও বেশি নির্যাতিত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কোনো কারণ ছাড়াই নারী যখন শিক্ষিত হন তখন তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়! বরং তখন নারীর ওপর আক্রোশ সৃষ্টি হয় তিনি শিক্ষিত বলে!

যেমনটা ধরুন, কোনো পরিবারের সাংসারিক জটিলতা দেখা দিলেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে বলতে শোনা যায়, ‘বউ শিক্ষিত হয়েছে তো কী হবে!” এখানে বিষয়টা এমন যে, নারী শিক্ষিত হলে তার ওপর সব দায়ভার দিয়ে পুরুষতন্ত্র মজা পায়। এরপর রয়েছে সন্তান লালন-পালনই শুধু না করে নারী যদি চাকুরিজীবী হন, তাহলে তো এ সমাজের চোখে ওই নারী এতটাই দোষী যে, সন্তান-পরিবার-পরিজন সবার চক্ষুশূল হন নারী। কারণ তিনি চাকরিজীবী। কিন্তু দিনশেষে নারীর বেতনের অংশ কিন্তু এই পরিবারই গ্রহণ করে। এমনও দেখা যায়, যেই নারীরা চাকরি করেন তাদের ব্যাংক একাউন্ট স্বামীর নামে। যাতে বেতনের অর্থ সরাসরি তার হস্তগত হয়। বাপের বাড়ি যাতে চালান না করতে পারে! এসব সবই এ সমাজের অতি পরিচিত ঘটনা!

শিক্ষিত নারী যে, এ সমাজের জন্য কতটা গলার কাঁটা তারাতা বারবারই প্রমাণ করে! বর্তমান সময়ে এসে ডিভোর্সের পরিমাণ বেড়েছে। আর এর কারণ হিসেবে যেকোনো অশিক্ষিত-শিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রই নারীর শিক্ষাকে দায়ী করছেন! কিন্তু একবারও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্যাতনের কথা স্বীকার করেন না! কারণ এ সমাজ পুরুষতান্ত্রিক শাসন-শোষণের দ্বারা চলে। ফলে পুরুষের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি নারীকে মনে নিয়ে চলতে হবে। দিনের পর দিন নারীকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন-নিপীড়নে জর্জরিত করলেও তাকে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতে হবে! পুরুষ অন্যত্র সম্পর্ক স্থাপন করে সংসারের প্রতি সব দায় চুকিয়ে দিলেও নারীকে নীরবে বাধ্য স্ত্রীর মতো স্বামীর পদসেবা করে চিরকালটা কাটিয়ে দিতে হবে! এ সমাজ আজ অবধি পুরুষের এমন হীন আচরণ-কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে।

আর এরফলেই নারীরা আজও নির্যাতনের শিকার। এমনকি বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দাম্পত্য সংকট দেখা দিলে শ্বশুরবাড়ি-বাপের বাড়ির অধিকাংশ সদস্যের সাপোর্ট থাকে পুরুষের প্রতি। এমন অনেক “শিক্ষিত নারীকে”ও বলতে শোনা যায়, পুরুষ একটু-আধটু এমন করবেই! তারা চেতনে হোক বা অবচেতনে পুরুষকে লাই দেয়! এখানেও কিন্তু শিক্ষিত নারীর ওপরই দোষ গেলো! কারণ শিক্ষা নারীর জন্য যতটা মুক্তির তার চেয়ে বেশি গলগ্রহের! সত্যি বলতেই তাই। শিক্ষিত নারীর বোঝার ক্ষমতা আছে। কিন্তু তার আত্মসম্মান এতটাই বেশি থাকে যে, নীরবে সব হজমও করে!

আমরা জানি, যেকোনো জিনিস সে সম্পর্ক হোক বা আর কিছু পাপের ঘড়া যখন পূর্ণ হয় তখন এমনিই শাস্তি নিশ্চিত হয়। ঠিক তাই। নারীর সহ্যের সীমা অতিক্রম করলেই তখনই নারী নিজের কথা ভাবতে শুরু করে। আমাদের সমাজে যতটা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বর্তমানে তার অধিকাংশই চূড়ান্ত রূপ৷ নেওয়ারই পর ভাঙছে। কোনো মানুষই সংসার করে ভাঙার জন্য নয়। আর নারীরাই মানসিকভাবে গড়েি তোলা হয়, ” লাল শাড়ি পরে সাদা কাফন নিয়ে বের হবে”। তার আগে স্বামীর ঘর থেকে নারীর বের হওয়ার রীতি এ সমাজে দেখা যায় না। কিন্তু এখন এমনটা অহরহ ঘটছে। তার জন্য নারীর শিক্ষাকে কেনো দোষারোপ করা হচ্ছে?

নারী শিক্ষিত বলেই নির্যাতনের শিকার হলে সেখান থেকে মুখ ফেরাচ্ছে। নিজের জীবনকে মূল্যায়ন করছে। এবং অত্যাচারীদের পাশ থেকে সরে মুক্তি খুঁজছে। কিন্তু এ সমাজের অধিকাংশ মানুষ শুধু নারীর শিক্ষা-স্বাবলম্বীকে হওয়াকে বারবার দুষছেন কোন লজ্জায়?

তাদের মতে কী ওই বর্বরোচিত দশা নারীরা সহ্য করছেন না তাই খুব জ্বালা! নারী নির্যাতনের শিকার হলেও স্বামীর মঙ্গল কামনায় সারাক্ষণ স্রষ্টার বন্দনা করবেন? যে বা যারা নারীদের এমন সময়টাকে নিয়ে মজা করেন, দুঃখ দিয়ে কথা বলেন, শিক্ষাকে অপদস্ত করেন তারা নিজেরা ওই জায়গায় নিজেকে একবার কল্পনা করুন! যদি আপনার বিবেক থাকে, সত্যিই যদি আপনি মানবিক বোধসম্পন্ন জীব হন তবে সত্যের পথাবলম্বন করবেন। নারী শিক্ষিত হলেই কাজে-অকাজে তাদের দোষারোপ করা ছাড়ুন। মানুষ হিসেবে মানুষের কী করা উচিত সেটা ভাবুন। সবচেয়ে বড় কথা ব্যক্তির জীবন, সে কীভাবে তা পরিচালনা করবেন এটা তার দায়িত্ব, আপনাকে কে অযথা নাক গলাতে বলেছে! তারচেয়ে বড় আপনি নিজের উন্নয়নে মনোযোগী হোন। নারীকে তার মতো করে বাঁচতে দিন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ