লোকজ জ্ঞান কি?

লোকজ জ্ঞান সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য স্থায়ী অধিবাসীদের মাধ্যমে চর্চিত কয়েক ধরনের প্রচলিত বিশেষ জ্ঞানকে বোঝায়। অর্থাৎ কোনও নির্দিষ্ট সীমানার অধিবাসীগণ স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থার জন্য লোকজ জ্ঞানের উদ্ভব হয়ে থাকে।
ক্রমান্বয়ে ব্যবহার ও যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই জ্ঞান পরিচালিত ও সমৃদ্ধ হতে থাকে এক পরম্পরা থেকে আরেক পরম্পরায়।
লোকজ জ্ঞান বিশেষত সেই প্রথাগত জ্ঞান যা গ্রামীণ/স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের জীবিকার তাগিদে যেমন- কৃষিকাজে, মৎস্য চাষে, পশু পালনে, স্বাস্থ্য পরিচর্যায়, স্থানীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করেন।
সাধারণভাবে গ্রাম বাংলার মানুষ নিজেদের স্থানীয় সমস্যার আদলে কয়েক প্রজন্মের অভিজ্ঞতা থেকে প্রভাবিত উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়েই নানা ধরনের কর্মকৌশল আবিষ্কার করেন এবং সেসব কর্মপন্থা স্থানীয় পরিবেশ, অর্থনীতি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা কার্যক্রমে ব্যবহার করে সেই নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিমণ্ডলে নিজেদের অভিযোজিত করেন।
লোকজ জ্ঞান সাধারণত সমস্যা মোকাবিলার টেকসই পরিবেশবান্ধব সমাধানের পন্থা দেখায়। বর্তমানের রূপচর্চায় চন্দন, মুলতানির ব্যবহার, স্থানীয় চিকিৎসায় হলুদের গুরুত্ব, কৃষিকাজে রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার সবই লোকজ জ্ঞানেরই উদাহরণ।
সর্বোপরি, অভিযোজনের লক্ষ্যে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সাংস্কৃতিক চর্চায় গড়ে উঠা অপ্রাতিষ্ঠানিক-ভাবে সংরক্ষিত কিংবা অলিখিত জ্ঞানগুলোকেই লোকজ জ্ঞান বলা যায়। লোকজ জ্ঞান ভিন্ন ভিন্ন ভৌগোলিক পরিমণ্ডলে আলাদা হয়ে থাকে, তাই লোকজ জ্ঞানকে সাংস্কৃতিক-ভাবে বৈচিত্র্যময়তা নিশ্চিতকরণে মর্ডান সাইন্স এর তুলনায় বেশি কার্যকর বলা হয়।