কম সময়ে পুরো বিশ্ব ঘুরে রেকর্ড তৈরি করেছেন যে নারী
নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়া নিয়ে রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। ছোটবেলা থেকেই তাদের শেখানো হয়, 'তুমি মেয়ে, বাইরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে বহু বিপদ। তোমার কাজ ঘরে থাকা।' আর যদিও ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি মিলে তাও সঙ্গে থাকতে হবে কারো। আর রাতের বেলায় মেয়ে বাইরে থাকবে? এ তো একদমই অসম্ভব।
এটি আমাদের সমাজের প্রতিদিনকার চিত্র। শুধু ঘরের বাইরে বের হওয়া নিয়ে প্রতিদিন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় অনেক মেয়েদের। আর সেখানে দেশের বাইরে? তাও একদমই একা একা, শুনলেই যেন হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জোগাড় হবে আমাদের সমাজের মানুষদের। কোন মেয়ে যদি একা পুরো বিশ্ব ঘুরতে চায় তবে তাকে রুখতে প্রয়োজনে শেকল বাঁধবে সমাজের মানুষজন। তবুও বিশ্বে এমন কিছু মেয়ে আছে যারা নিজেদের আত্মবিশ্বাস দ্বারা সে শেকল ভেঙে সামনে এগিয়ে যায়।
তেমনি একজন অ্যামেরিকান নারী 'ক্যাসি ডি পিকল'। শত বাঁধা পেরিয়ে তিনি পুরো বিশ্বে তৈরি করেছে নতুন ইতিহাস যা তার আগে কেউ করতে পারেনি। ক্যাসি পৃথিবীর প্রথম কোন নারী যে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ঘুরেছেন, তাও একা। শুধু তাই নয় এই কাজটি তিনি করেছেনে বাকি সকলের থেকে সবথেকে কম সময়ে। নাম লিখিয়েছেন গিনেস বুক ওয়ার্ল্ডে।
তবে এই সফলতার পথটাও নেহাত কম কঠিন ছিলোনা। ছোটবেলা থেকেই ক্যাসি দেখতে পায়, যে কোন পরিকল্পনার শুরুতেই ক্যাসির শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছিলো তার আশেপাশের মানুষ। যারা প্রতিনিয়ত তার সামনে একটা খারাপ বিশ্বকে তুলে ধরতো এবং তাকে সতর্ক করতো। তাকে মনে করানো হত, সে যেকোনো মুহূর্তে ধর্ষণের শিকার হতে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে। বস্তুত এসবই ছিলে ক্যাসিকে যেকোনো উপায়ে থামানোর পাঁয়তারা।
তবে ক্যাসি ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। সে পুরো বিশ্ব একা ঘুরতে চেয়েছিল এবং তাকে দেওয়া সকলের মিথ্যে ভয়ও ভাঙতে চেয়েছিল। সে কারো পরামর্শ কিংবা উপদেশ নয় বরং নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলো। তাই একদিন ক্যাসি সিদ্ধান্ত নিলো সে তার ভয়কে জয় করবে এমন কিছু করে যা এখনো কোন নারী করে উঠতে পারেনি। আর সেজন্যই তিনি সিদ্ধান্ত নেন পুরো বিশ্ব একা ঘুরে দেখার। শুধু তাই নয় পাশাপাশি তিনি পুরুষদের রেকর্ডও ভাঙতে চেয়েছেন। এ যাবৎকালে যেকজনই এ রেকর্ড করেছেন সকলের থেকে কম সময়ে বিশ্ব ঘোরার পরিকল্পনা করেন তিনি।
তবে তার পুরো পরিকল্পনাটির জন্য সময় লেগেছিল পুরো তিন বছর। তার এই ট্রিপ এর জন্য তাকে বেশ অনেকগুলো পরিকল্পনা করতে হয়। যেমন, ভিসা, স্পন্সর, ইনভেস্টর ইত্যাদি। গিনেস বুকে নাম লেখানোটা ছিল বিশাল একটি চ্যালেঞ্জ। সেখানে ছিল বেশ অনেকগুলো নিয়ম। যেমন, তিনি কোন দেশে ১৪ দিনের বেশি সময় কাটাতে পারবেন না এবং তিনি শুধু ঘুরে আসলেই হবেনা তার দরকার হবে সে দেশে স্ব-শরীরে উপস্থিত থাকার প্রমাণ। সে তালিকায় কিন্তু রয়েছে উত্তর কোরিয়ার মতো দেশও।
এতোসব চ্যালেঞ্জ দেখে প্রথমে ভয় পেলেও, ক্যাসি ভাবেন তাকে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে এবং সফল হতে হবে। কারণ তিনি চেয়েছেন যেন তাকে দেখে বিশ্বের যেকোনো নারী বলতে পারে, 'হ্যা, আমরাও পারবো এগিয়ে যেতে।'
স্বভাবতই সবার মনে প্রশ্ন জাগবে, 'পুরো বিশ্ব ঘুরতে ঠিক কত খরচ পরলো?' উত্তর হলো,'মাত্র ১০ হাজার ডলার'। তার বাকি সব খরচের জন্য ছিল স্পন্সর। এছাড়াও ক্যাসির কাছে ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা। তাই সে কোন চিন্তা না করে বেরিয়ে পরলো তার যাত্রায় এবং সবথেকে কম সময় তিনি পুরো বিশ্বের ১৯৬ টি দেশ ঘুরে রেকর্ড তৈরি করলেন। এমনকি নর্থ কোরিয়ার মতো রক্ষণশীল দেশও বাদ রাখেননি একা এই নারী। সে তালিকায় বাদ যায়নি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও ইরানও।
তার ভ্রমনকালীন সময়ে বেশ কিছু সমস্যায়ও পরতে হয়েছে তাকে। দুবার জড়িয়েছেন পুলিশি ঝামেলায়। আর একজন নারী হিসেবে তার জন্য এসব ঝামেলা থেকে বের হওয়া ছিল খুবই কঠিন কাজ। তবে প্রত্যেকবারই সাহসিকতার সঙ্গে তিনি সকল বাঁধা অতিক্রম করেছেন। ট্রিপের পুরো সময়টাতে তিনি তার, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা যেকোন উপায়ে যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন রেখেছিলেন।
তার পুরো যাত্রা শেষে তিনি বেশ মজার অভিজ্ঞতাই শেয়ার করেছেন। তার এ পরিকল্পনার গোঁড়ার দিকে তাকে যে খারাপ পৃথিবীর ভয় দেখানো হয়েছিল তেমন কোন কিছুর খোঁজই তিনি পাননি। পুরো বিশ্বজুড়ে তিনি মানবতার এক সুন্দর নিদর্শনই দেখেছেন। তিনি কোন কোন দেশের মেয়র, মন্ত্রীদের সাথেও দেখা করেছেন। শুধু তাই নয় তার ভ্রমণকালে তিনি দেখা করেছেন স্পেনের রাজার সাথেও।
যাই হোক, ক্যাসি পুরো বিশ্বভ্রমণ কত দিনে শেষ করেছিলো জানেন? মাত্র ১৮ মাস ১০ দিনে। অর্থাৎ মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই তিনি তার ভ্রমণ শেষ করেছেন যা আগে কেউ করতে পারেনি। এবং এখানেই তিনি প্রমাণ করেছেন, 'নারীরাও পারে।' শুধু ঘরের বাইরে নয় তারা একা বিশ্বভ্রমণেও বেরোতে পারে, সফলতার গল্পও তৈরি করতে পারে। তাদের নিজস্ব কোন সীমাবদ্ধতা নেই। সমস্তটাই সমাজের বেঁধে দেয়া। তাই আমাদের উচিত মেয়েদেরকে ভীতু হওয়ার শিক্ষা না দিয়ে বরং তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য তাদের উৎসাহ প্রদান করা।