দীর্ঘ সময় কাজে যেসব স্বাস্থ্য হানি হয়
দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে তার প্রভাব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
হৃদরোগ, স্ট্রোকের মত বড় ধরনের সমস্যাও হতে এই অতিরথ কাজের প্রভাবে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার করা এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে আসে। জরিপে ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৯৪ টি দেশ থেকে এ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷
জরিপে দেখা যায়, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করার কারণে ২০১৬ সালে ৪ লাখ মানুষ স্ট্রোক করে মারা যায়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এ সময়ের মধ্যে স্ট্রোক ও হৃদরোগে মৃত্যু হার বেড়েছে ১৯% এবং ৪২%। এমনকি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা মানে দীর্ঘ সময় বসে থাকা। আর দীর্ঘ সময় নড়াচড়া না করে একভাবে বসে থাকায় অনেক সময় ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস নামের এক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সমস্যায় পায়ের মাংস পেশির ভেতর যে শিরা গুলো থাকে সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। আর এই শিরাগুলোই মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের সাথে শরীরের অন্যান্য অংশের রক্ত চলাচলে সরাসরি ভূমিকা রাখে৷ রক্ত জমাট বেঁধে গেলে এই চলাচল ব্যাহত হয়।
এই জমাট বাঁধা রক্ত অর্থাৎ ক্লট পায়ে ব্যথা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্লট টি যদি কোনোভাবে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় বা কোন ধমনীতে আটকে যায় তখন স্ট্রোক এর মত সমস্যা দেখা দেয়। একইভাবে ক্লটটি হৃদযন্ত্রে আটকে গেলে হৃদযন্ত্রে আর পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছাতে পারে না।
একভাবে বসে কাজ করায় মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশিতে ব্যথা হয় এবং একপর্যায়ে মেরুদণ্ডেও ব্যথা হতে পারে। যারা কম্পিউটারে কাজ করেন, তাদের কম্পিউটারের মনিটরের উচ্চতার সাথে যদি চোখের সামঞ্জস্য না থাকে এবং দীর্ঘ সময় কাজ করলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
এছাড়াও দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে কাজ করলে চোখের সমস্যা দেখা দেয়। এভাবে বসে কাজ করায় তেমন একটা শারীরিক পরিশ্রম হয় না। এতে ডায়াবেটিসও দেখা দেয়।
দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে শুধু যে শারীরিক সমস্যা হয় তা নয়। এতে মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় কাজ করায় মানসিক চাপ বাড়ে। এতে মানুষের নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা কমে যায়, একঘেয়েমি চলে আসে। অনেক সময় নিজের উপর বিরক্তি ভাব কাজ করে। ফলে শরীরের পাশাপাশি মানসিক ভাবে ক্লান্ত লাগে নিজেকে এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ফলে কাজেও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।