পিরিয়ডের সময় বিষণ্নতা, জানার আছে অনেক কিছু
পিরিয়ডের সময় ডিপ্রেশন একটি অতি পরিচিত ঘটনা। বিশেসজ্ঞরা মনে করেন , পিরিয়ডের সময় হরমোনাল পরিবর্তনই মানসিক অবসাদের ফল।
অনেকেই পিরিয়ডের আগে পিএমএস কিংবা প্রি মেন্সট্রুয়াল সিন্ড্রমের মধ্যে দিয়ে যান। এ সময় মাথাব্যথা ও মেজাজ খিটখিটে ভাব হওয়াটাই এর বৈশিষ্ট্য। এছাড়া পিরিয়ড চলার সময় আরও মারাত্কম কিছু লক্ষণও দেখা যায় অনেকের মাঝে। যেমন, মানসিক অবসাদের মধ্য দিয়ে যাওয়া, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে রেগে যাওয়া, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। এখন বিষয়টি হলো, পিরিয়ডের সময় বিষণ্নতা কেন হয় ?
পিরিয়ডের সময় মূলত হরমোনের তারতম্য অনেক বেশি হয়ে থাকে। ফলে মেজাজ দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এটা বেশিরভাগ নারীরই হয়ে থাকে। এই হরমোনের ওঠানামার সময়ে কিছু ভাগ আছে। যেমন, পিরিয়ডের দ্বিতীয়াংশে নারীরা ‘লিউটিয়াল ফেইজের’ মধ্য দিয়ে যায়। এ সময় মন বিষণ্ন থাকা এবং কিছু কিছু ব্যক্তি বিশেষে বিরক্তি বোধ হওয়াটা স্বাভাবিক।
হরমোনের এমন ব্যাপক উত্থান-পতনের জন্য নিউরোট্রান্সমিটার নামক মস্তিষ্কের রাসায়নিক মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই নিউরো ট্রান্সমিটারের উদাহরণ হলো, সেরোটনিন ও ডোপামিন। এগুলো ঘুম, মেজাজ, উৎসাহ ও প্রেরণাকে প্রভাবিত করে।
ডোপামিন কম নিঃসরণ হওয়ার কারণে যে সমস্যা গুলো হয়, তার মধ্যে প্রধানই হলো মন বিষণ্ন থাকা। এরপর আসে উদ্বেগ, ঘুম কম হওয়া, বিরক্তি, রাগ, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি। যা একজন মানুষের মানসিক অবস্থাকে বিপাকে ফেলার জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
তাই, বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন যে জেনেটিক পার্থক্য কিছু লোককে হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন ও মস্তিষ্কে এই হরমোনের প্রভাবের জন্য অন্যদের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।
পিরিয়ড শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর যখন ‘ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের’ মাত্রা আবার বাড়তে শুরু করে। তখন এই লক্ষণগুলো প্রায়ই চলে যায়। তবে এই চলে যাওয়াটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না । আবার কিছুদিন পর ফিরে আসতে থাকে এই বিষণ্নতা। এরপর আবার পিএমএস এবং পিএমডিডির লক্ষণগুলো ফেরত আসে।
পিএমএস ( PMS- Pre menstrual Syndrome) কী
পিএমএস শারীরিক ও মানসিক উভয় উপসর্গের কারণ হয়। এই লক্ষণগুলি পিরিয়ডের শেষ ও শুরুর মধ্যে যেকোনও পর্যায়ে শুরু হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রায় ৭৫ ভাগ নারীরা পিএমএস-এর মধ্য দিয়ে যান । পিএমএস-এর লক্ষণগুলো ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু নারীর খুব হালকা লক্ষণ পারে, অন্যরা যেগুলো অনুভব করে, সেগুলো আরও মারাত্মক হতে পারে।
পিএমএস (PMS)-এর কারণে যা যা হতে পারে, সেগুলো হলো:
- উদ্বেগ
- বিষণ্নতা
- ক্ষুধামন্দা
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
- ক্লান্তি
- মাথাব্যথা
- বিরক্তি ও রাগ
- মনোযোগের অভাব
- ঘুমের অসুবিধা
পিএমডিডি (PMDD-Premenstrual Dysphoric Disorder) কী
পিএমএস ছাড়াও আরেকটি বিষয় হচ্ছে পিএমডিডি (PMDD) । পিএমএস-এর চেয়েও পিএমডিডি অনেক বেশি মারাত্মক ও তীব্র । এর জন্য বিষণ্নতা তো থাকেই , এছাড়া পিএমডিডির পরিণতি এতটাই তীব্র যে অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা এবং মারাত্মক বিষণ্নতা এসে ভর করে।
পিএমডিডির (PMDD) লক্ষণগুলো হলো:
- বিষণ্নতা
- অতিরিক্ত মাত্রায় মানসিক অবস্থার পরিবর্তন
- প্যানিক অ্যাটাক
- কান্নাকাটির আধিক্য
- কর্মস্পৃহা কমে যাওয়া
- ব্যক্তিবিশেষে কোনো আগ্রহ খুঁজে না পাওয়া ।
৩-৮ শতাংশ মানুষ পিএমডিডির মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। এ সময় আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর প্রি মেন্সট্রুয়াল ডিসর্ডার ( IAPMD)-এর গবেষণা অনুযায়ী, ১৫ শতাংশ নারী পিএমডিডির সময়ে আত্মহত্যা প্রবণকে অনুভব করেন এবং সবচেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে ট্রান্সজেন্ডার নারীরা।
কি করা উচিত?
- যারা পিরিয়ডের আগে পরে কিংবা পিরিয়ডের সন্ময়ে বিষণ্নতা অনুভব করেন, তাঁরা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।
- ডিপ্রেশন, অ্যাং জাইটি ও মানসিক অস্থিরতার জন্য একজন মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরি।
- পিরিয়ডের সময় গুলো নির্ণয় করার জন্য গুগল প্লেস্টোর থেকে কিছু এপপ-এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। যেন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর এই তথ্যগুলো কাজে লাগানো যায়।
হোম রেমিডিসের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। অনেক বেশি কার্যকরও হয়।
- খাবার দাবারের রুটিন মেনে চলতে হবে ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
- নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে।
- পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি । কারণ ঘুম মানুষের মন স্বাস্থ্য ও মেজাজকে প্রভাবিত করে।
- দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য সকালে কিছুক্ষণ মেডিটেশন বা ইয়োগা করাটা সবচেয়ে সুন্দর উপায়।
পিরিয়ডের সময় বিষণ্নতাকে অনেক নারীরা এবং তাদের পারিপার্শ্বিকতা অনুভব করতে পারলেও পুরোপুরি পেরে ওঠে না। চরম মাত্রায় হরমোনের ওঠানামার জন্য নারীদের মন এবং চিন্তার জগতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসে।