নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
পুরুষদের তুলনায় নারীদের গড় আয়ু বেশি। তবে গড় আয়ু বেশি হওয়ায় নারী বেশিদিন বাঁচে কিংবা সুস্থ থাকে এমন কোনো কথা নেই। নারীদের নানা ধরনের রোগ হচ্ছে, তারা বাঁচেন বলে তাদের শারীরিক সুস্থতার কথা নিয়ে হেলাফেলা করলে চলবে না।
নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে যদি কথা বলতে হয় এটা খুবই সংবেদনশীল একটা জায়গা। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নারীরা নানা রকম শারীরিক বিষয়ে ভুক্তভোগী। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত তারা নানা রকম সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সময় যত যাচ্ছে, নারীদের রোগের পরিমাণও তত বাড়ছে। নারীদের শারীরিক বিষয় বলতেই শুধু নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় বোঝানো হয় না। এখানে জড়িত থাকে অনেক সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন জরিপ থেকে দেখা যায় নারীরা নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুক্তভোগী এবং তা বহু কাল ধরে হয়ে আসছে। তেমন কোন সুখকর তথ্য নারী স্বাস্থ্য নিয়ে নেই। বাংলাদেশ নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেক ধাপ পিছিয়ে আছে।
বর্তমানে নারীরা স্তন ক্যানসার, থাইরয়েড, আয়রন ডেফিসিয়েন্সি, হিমোগ্লোবিনের অভাব, পিসিওডি, রক্তচাপ,ওভারিয়ান ক্যানসার এই ধরনের রোগগুলোতে নারীর ভুক্তভোগী।
স্তন ক্যানসার
বর্তমানের নারী মৃত্যুর বেশিরভাগ এর জন্য দায়ী স্তন ক্যানসার। বাংলাদেশে শতকরা ৯৮ শতাংশের বেশি নারী প্রতি বছর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
থাইরয়েড
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগে নারীরা থাইরয়েডে। নারীদের হাইপোথ্যারয়ডিজমে ভোগেন আবার কিছু মহিলা হাইপারথ্যারয়ডিজমে। পা ফোলা, হাত-পা ও জয়েন্টগুলোতে ব্যথা থাইরয়েড সমস্যার সাধারণ উপসর্গ।
আয়রন ডেফিসিয়েন্সি
রক্তের আয়রনের ঘাটতি থাকলে সেটাকে রক্তশূন্যতা বলা যায়। নারীদের রক্তশূন্যতার যে হার পুরুষের তুলনায় বেশি। কারণ নারী-পুরুষের শরীরে আয়রনের চাহিদা সমান থাকেনা। নারীদের আয়রনের চাহিদা অপেক্ষাকৃত বেশি হয়৷ বাংলাদেশে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ রক্ত ভুক্তভোগী হলেও এদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি।
ওভারিয়ান ক্যানসার
মহিলাদের মধ্যে ওভারিয়ান ক্যানসার বেশিরভাগই মেনোপজের পরে দেখা যায়। তাই ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে ঋতুজরার আগেই মহিলাদের নির্দিষ্ট পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত।
পিসিওডি
এই রোগটি মূলত এক কথায় অনিয়মিত পিরিয়ড সংক্রান্ত সমস্যাকে বুঝায়। এই সমস্যার কারণে প্রজনন স্বাস্থ্য যেমন ঝুকিতে থাকে এছাড়াও শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাধতে শুরু করে।
রক্তচাপ
নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পরে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা খুব বেশি মাত্রায় দেখা যায়। বিশেষ করে ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে নারীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দায়ভার প্রথমত পরিবারের দ্বিতীয়ত সমাজের তৃতীয়ত রাষ্ট্রের।
প্রথমত পরিবারের এর কারণ হলো বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে পরিবারের সকলের খাবার নিশ্চিত করার পরে অবশিষ্ট অংশ যেটা থাকে সেটা তার নিজের জন্য। তারা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা কখনোই ভাবেনা। আর পরিবারেরও সেই সব দিকে রয়েছে অনেক খামখেয়ালী পোনা। নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের তেমন কোন গুরুত্ব নেই। অনেক সময় পরিবারের কন্যা সন্তানদের ক্ষেত্রেও খুব একটা নজর তারা রাখে না।
নারী স্বাস্থ্য সমাজের দায়ভারের কথা যদি বলা হয় সমাজের কারণে মূলত নারীর স্বাস্থ্যকে গুরুত্বহীন ভাবে দেখা হয়। সমাজকে যেভাবে গড়ে তোলা হয় সমাজ সেভাবেই গড়ে ওঠে। তাই নারীদের বিষয়ে সমাজ কখনোই সংবেদনশীল নয়, তাই নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সমাজের অনেক দায়ভার রয়েছে।
আর রাষ্ট্রের ভূমিকা বলতে রাষ্ট্র কখনো নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা নিয়ে খুব গুরুত্ব কখনই ভাবেনি। যে গতিতে বা যেই ধরনের বিষয়তে নজর দিলে নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে সেই সমস্ত ব্যাপারে রাষ্ট্র কখনোই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি।
নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবারের সদস্য, সমাজ ও রাষ্ট্রের করণীয়
নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য চোখে পড়ার মতো উদ্যোগ কখনই দেখা যায় নি। উন্নতির থেকে অবনতি বেশি চোখে পড়েছে। নারী সুরক্ষার জন্য প্রথমত সকল ধরনের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আগে জানতে হবে। পুষ্টিগুণ বলতেই মানুষ মাছ মাংস এইসবকে বুঝে। কিন্তু পুষ্টিগুণ শাকসবজি ফলমূল সবকিছুতেই রয়েছে। তাই সকল খাদ্যের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সবার প্রথমে জানতে হবে। পরিবারের সদস্যদের নারী স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে, যেমন যত্ন একজন নারী তার পরিবারের উপর নিয়ে থাকে।
বিভিন্ন ধরনের সরকারি বেসরকারি সংস্থা নারী স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে তবে সেই কাজ করার মধ্যে ভিন্নতা আনতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নারী স্বাস্থ্য সম্পর্কে নারীদেরকে অবগত করতে পারি। এছাড়াও রাষ্ট্রের উদ্যোগে টিভিতে বিভিন্ন নারীর স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করার ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এমন উদ্যোগ নিলে নারীরা নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি ঘরে বসেই সচেতন হতে পারবে।
এছাড়াও নারীদের নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে দিনশেষে নিজেকে নিয়ে নিজের ভাবতে হবে নিজেকে নিয়ে নিজের ভাবাটা অত্যন্ত জরুরী। পরিবারের সবার কথা যেমন ভাবা হয় তেমনি নিজের কথা ভাবতে হবে। নিজের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য ও সঠিক পুষ্টিগুণ সবকিছু নিজেরই নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের নারী সদস্যদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন বেঁচে থাকাটাই আসল নয় সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই সকলের কাম্য। তাই নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হওয়া জরুরি।