তিরিশ পেরোলে নারীর যেসব স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি
নারীর নানা রূপ। কখনো কন্যা, কখনো বোন,কখনো মা, কখনো স্ত্রী হিসেবে তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নত হওয়া স্বত্তেও আমাদের সমাজ তো দূরে থাক পরিবারেরই বেশির ভাগ নারী খুব অসুস্থ না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। অথচ একজন সুস্থ নারীই পারেন একটি সুস্থ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সহায়ক হতে ।
নারীর স্বাস্থ্য রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে নিজেদেরই। ভয় ও লজ্জা কাটিয়ে সচেতনতা অবলম্বন করে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মনোযোগী হওয়া জরুরী ।
বিশেষ করে পরিবেশ দূষণ, খাবারে ভেজাল, অনিদ্রা, কাজের চাপ, মানসিক উদ্বেগসহ নানা কারণে বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক রোগ শরীরে বাসা বাধে। আর বয়স তিরিশ পেরিয়ে গেলে এসব জটিলতা সাধারনত আরও বাড়তে থাকে।
এ সম্পর্কে মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন্স এন্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার রোকসানা খানম বলেন, দেখা যায় নারীদের বয়স তিরিশের বেশি হয়ে গেলে শরীরের নানান রকম হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। তাই স্বাস্থ্য সম্পর্কে এ সময় বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
এসময় শরীরচর্চা, খাওয়া-দাওয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের দিকে যেমন নজর দেওয়া প্রয়োজন, তেমন নারীর কিছু শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে রাখা উচিত। তিরিশ এর বেশি বয়স হলে নারীর যেসব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি সে সম্পর্কে ডাক্তার রোকসানার কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক-
ম্যামোগ্রাম: অনেক সময়েই নারীর স্তনে একটি ছোট্ট লাম্প বা ফোলাভাব দেখা যায়। বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেয়ার কারণে হয়তো এই ছোট্ট লাম্পটিই বড় আকার ধারণ করে এমনকি তা স্তনের ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। অনেক সময়েই স্তনের ফোলাভাবটি ম্যালিগন্যান্ট হয়। তাই যদি কখনও স্তনে ব্যথা হয় বা কোনো অবাঞ্ছিত অংশ বা মাংসপিন্ড দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের সাহায্য নিন এবং ম্যামোগ্রাম টেস্ট করিয়ে নিন।
জরায়ুতে ক্যানসার পরীক্ষা: নিময়িত প্যাপ স্মিয়ারের মাধ্যমে নারীর জরায়ু পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া উচিত। ক্যানসারের সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তাতে আভাস পাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি ৩০ বছরের পর এইচপিভি পরীক্ষা করে দেখা যায় ক্যানসারের ঝুঁকি কতটা আছে।
গর্ভধারণের পরীক্ষা: ৩০ বছর বয়সের পর নারীদের শরীরে ডিম্বাণু উৎপাদনের ক্ষমতা কমতে থাকে। মাতৃত্ব পরিকল্পনা করার আগে অবশ্যই কিছু শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিতে হবে শরীরে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না।
লিপিড প্রোফাইল: সুস্থ জীবন থাকতে স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া এবং শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। তাই সব ঠিক আছে কি না দেখা জন্য লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট ও হিমোগ্রাম: অনেক মেয়ের মধ্যে অ্যানিমিয়া এবং থাইরয়েডের মতো রোগের কোনো রকম উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু পরীক্ষা করালে এই রোগ ধরা পড়ে। তাই হিমোগ্লোবিন কতটা এবং থাইরয়েড প্রোফাইল কী রকম জানা থাকলে এই রোগ সহজেই ধরা পড়বে এবং চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া যায়।
চোখের চেক আপ: চশমা পরলে তো অবশ্যই মাঝে মাঝে আপনার চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করানো প্রয়োজন, কিন্তু যদি চশমা নাও পরেন, সেক্ষেত্রেও চোখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। ৩০ পেরোলে ছানির সমস্যা না হলেও পরবর্তীতে যাতে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে। এখন আমাদের বেশিরভাগ সময় কাটে ল্যাপটপ বা মোবাইলের স্ক্রিনে। তাই চোখে বেশি চাপ পড়ছে।
ব্লাড সুগার টেস্ট: অনেক নারীর রক্তে শর্করার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি থাকে। তাই ৩০ বছরের পর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।