স্বল্প মজুরিতে কাজ করতে হয় সমতলের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নারীদের
বাংলাদেশের সমতলের জেলাগুলিতে ৩০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ২০ লক্ষাধিক অধিবাসীর বাস। যার অর্ধেক-ই নারী। সংখ্যার দিক থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা অগ্রগামী হলেও সুযোগ-সুবিধা ও অধিকারের দিক থেকে তারা পশ্চাৎপদ। দশকের পর দশক ধরে মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নারী শ্রমিকরা। কৃষি জমিতে সমান কাজ করলেও নারীদের মজুরি পেতে হয় পুরুষের চেয়ে কম। অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে প্রতিদিন কম মূল্যে শ্রম দিয়ে যেতে হয় তাদের।
ঘর সংসার গোছানোর পাশাপাশি বাড়ির বাইরে মাঠে দিনমজুরির কাজ করে পারিবারিক আয়ের সংস্থানে তারা ব্যস্ত থাকলেও খোদ পরিবারেই তাদের নিপীড়নের শেষ নেই। নারীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পরিবার ও সমাজের উন্নয়নের জন্য অবদান রেখে চললেও তাদের নূন্যতম স্বীকৃতিটুকুও নেই।
সদর উপজেলার বৈলঠা গ্রামের কোল সম্প্রদায়ের ৪৪ বছর বয়সী নিরাসি টুডু ১৩ বছর বয়স থেকেই কাজ করেন কৃষি জমিতে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি মজুরি বৈষম্যের শিকার। এখন ধান রোপণ বা কাটার কাজ না থাকায় তিনি একটি নার্সারিতে দিনমজুরের কাজ করেন। যেখানে পুরুষ শ্রমিকরা পান দৈনিক ৩০০ টাকা, সেখানে নিরাসি টুডু পান ২৫০ টাকা। পেটের দায়ে এই বৈষম্য মেনে নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে তাকে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার শান্তিপাড়ার আলামনি টুডু (৪৫) কাজ করেন মসুর ডালের ক্ষেতে। তিনি জানান, মসুর কাটার কাজ করে দৈনিক ২৫০ টাকা পান। পুরুষের চেয়ে ৫০ টাকা কম পেলেও কিছু করার নেই। অভাবের কারণে বাধ্য হয়েই তাকে কাজ করতে হয়। শুধু কোল সম্প্রদায়ের নারীরা নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আশপাশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাঁওতাল, ওঁরাওসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের নারীরা দশকের পর দশক ধরে এই মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। সমান শ্রম দিলেও পুরুষের চেয়ে দৈনিক ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কম পারিশ্রমিক পান। এই নারীরা বৈষম্যের কথা জেনেও অভাবের কারণে বাধ্য হয়েই কাজ করেন।
উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিংগু মুর্মু বলেন, 'জেলায় সাঁওতাল, ওরাঁও ও কোলসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জে বসবাস করেন। এই সব সম্প্রদায়ের নারীরা জমিতে কাজ করেন, তারা কাজে ফাঁকি দেন না এবং দক্ষ। তারপরও নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। এটা অবিলম্বে দূর হওয়া উচিত এবং লিঙ্গ বৈষম্যও দুর করা উচিত।'
সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা সমাজের সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও তাদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বরং দেশে আপামর নারীদের জন্য চলমান যে সব কর্মসূচি আছে সেগুলোতেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের অন্তর্ভূক্তকরণের তেমন উৎসাহ দেখা যায় না। যার কারণে এ নারীরা উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় আসতে পারছে না।