নারীর সিদ্ধান্ত যেন তার নিজের ইচ্ছাতেই হয়
একদিন এক ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে নিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি গেলেন।বাড়ির জামাইর জন্য কমপক্ষে ৪০ পদের রান্নাবান্না হয়েছে। ভদ্রলোক আমোদমাখা কণ্ঠে তার শ্বশুরকে বললেন, বাবা, স্বর্গের ধারণাটা হয়তো ছেলেদের শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে, তাই না? শ্বশুর জিজ্ঞেস করলেন, আর নরকের আইডিয়া? সাথে সাথে ভদ্রলোকের স্ত্রী বললেন, কেন, মেয়েদের শ্বশুরবাড়ি থেকে!
এই দেশে বিয়ের পর নারী ও পুরুষের জীবনে একটা আমূল পরির্বতন চলে আসে। মেয়েদের চলে যেতে হয় তার স্বামীর বাড়িতে। সেটা একক পরিবার হলে একরকম। আবার যৌথ পরিবার হলে আরেক রকম। কিন্তু পরিবার যৌথ হোক বা একক, বাড়ির বউর প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, সেটা অনেক সময়ই অসহনীয় হয়ে ওঠে।
একজন নারী যখন তার পরম স্নেহের, আয়েশের জায়গা ছেড়ে বিয়ে করে নিজের স্বামীর সাথে থাকতে চলে আসে, তখন স্বভাবতই তার কাছে জায়গাটা অপরিচিত বলে মনে হবে। এর ওপর একজন নারী সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তার শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে চলতে। কিন্তু তার এই চেষ্টাকেও যদি অবজ্ঞা করে শ্বশুরবাড়ির মানুষেরা, এ-ছাড়া আরো কিছু অযাচিত মানসিক চাপ প্রয়োগ করে, তখন তার অবস্থাটা কেমন হয়?
অনেক সময়ে পারিবারিক কোলাহলে বেশির ভাগ সময়ে দেখা যায়, একজন শ্বাশুড়ি তার ছেলের বেউকে অন্য মানুষ হিসেবে দেখেন। তার কাছে সে অন্য একজনের মেয়ে। এবং তার নিজের আশা থাকে, ছেলের বউ তার ঘরের সমস্ত কাজ করে দেবে। তার বাধ্যগত হয়ে থাকবে। কিন্তু নিজের সন্তানের বেলায় ততটাই ভিন্ন আচরণ করেন তিনি। তিনি চান না, তার নিজের মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে তার সাথে একই আচরণ করা হোক। কেবল ছেলের বউর জন্যই চলে আসে সমস্ত নিয়ম-কানুন!
ঘরের ভেতরে যে মানসিক চাপে নারী থাকে, সেটা যে কেবল শ্বশুরবাড়িতেই, তা না । তার নিজের বাড়িতেও তার অনেক মানসিক চাপ থাকে। একজন নারী যখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে চায়, তখন পরিবারের কাছ থেকে তাকে অনুমতি নিতে হয়। পরিবার যদি মনে করে, সেটা হবে, তা না হলে তাকে ঘরে বসে থাকতে হবে!
সব পরিবারে নারীকে একটা বোঝা হিসেবে দেখা হয়। বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতিটা এমন ভাবে নেয়, যেন এটা একটা কোরবানির গরু, বাজারে বিক্রি করার সামিল। পড়ালেখা করানো হয় ভালো স্বামী পাবার আশায়। গায়ের রং কালো থাকলে তার মুখে প্রতিদিন চন্দনের স্কিন হোয়াইটেনিং ক্রিম লাগানো হয়, যেন মেয়েটা ফর্সা হয়ে যায়, আর ভালো বিয়ে দেয়া যায়। যে নারী নিজের অধিকার নিয়ে সচেতন, তার পরিবারের ধারণা হয়, সে মেয়ে হওয়ার তাদের কপালে বুঝি শনিই নেমে আসল।
কিন্তু একজন মা, যিনি কিনা নিজের সমস্ত জীবন পরিবারের জন্য উৎসর্গ করে দিলেন, কিভাবে তিনি তার নিজের মেয়েকেও একই জীবন দিতে চান! কারণ, তিনি মনে করেন, এটাই বুঝি জীবনের পরম মর্যাদা।
বলছি না? একজন গৃহিণী হওয়া মানে নিজের জীবনের সব বিসর্জন দিয়ে দেওয়া। একজন কর্মজীবী নারী হওয়া যেমন যুদ্ধের, তেমনি একজন গৃহিণী হওয়াও নিজের একটা স্বাধীন সিদ্ধান্ত। কিন্তু কারো যেন জীবনে এমন কিছু করতে না হয়, যে কারণে জীবনে হতাশার জন্ম নেয়। নিজের কাজটা কেউ অফিসে বসে করবে, নাকি বাসায় বসে করবে সেটা যেন নিজের স্বাধীন সিদ্ধান্ত হয়। অন্য কারো বাধ্য হয়ে যেন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে না হয়।
হোক বিয়ে, হোক সন্তান ধারণ, হোক সন্তান দত্তক নেওয়া, কিংবা হোক তা ডিভোর্স, নারীর সিদ্ধান্ত যেন তার নিজের ইচ্ছাতেই হয়।