ব্যাংকের চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে
দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তবে চাকরি ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়েই ছিলো নারীরা। তবে এখন সরকারি চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণপূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাড়িয়েছে ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি ব্যাংক খাতেও বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ। দেশে বর্তমানে ২২ হাজারেরও বেশি নারী ব্যাংক খাতে চাকরি করছেন। এখন যারা চাকরিতে আসছেন এমন ব্যাংকারদের মধ্যে ১৮ শতাংশের বেশি রয়েছেন নারী। এক সময় তা ১০ শতাংশেরও কম ছিল। ব্যাংক খাতের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের লিঙ্গসমতা বিষয়ক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব বলছে, ব্যাংক খাতে যত লোক কাজ করে, তার প্রায় ১২ শতাংশ নারী। ২০১৭ সাল শেষে ব্যাংক খাতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জন। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ২২ হাজার ৫৩ জন নারী। তবে ২০১৮ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর হার কিছুটা কমে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনায় নিলে এ খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে কর্মরত ৫১ হাজার ৪৮৩ জনের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে রয়েছে ৯ শতাংশ নারী। এ ছাড়া মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে ১৫ শতাংশ এবং প্রারম্ভিক পর্যায়ে রয়েছে ১৩ শতাংশ নারী। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবং তার ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে নারী মাত্র ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক বাদে দেশে কার্যরত অন্য ৫৯টি তপশিলি ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোতে জনবলের সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০৩। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে, এরমধ্যে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৮ জন। আর নারী কর্মীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৩৭৮ জন। সে হিসাবে ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মী ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর রয়েছেন ১৬ শতাংশ। দেশের ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ১৫ জন নারী চাকরি করেন।
বিশ্বে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বিষয়ে প্রতিবছর ‘দ্যা গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট’ প্রকাশ করে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম। বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছিল শীর্ষে। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বের ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৫০তম। প্রতিবেদনটি বলছে, এমনটা সম্ভব হয়েছে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে। প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি অনুকূল কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা ও প্রতিষ্ঠানের সর্বক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানসমূহের লৈঙ্গিক সমতা বিষয়ক সূচক পর্যালোচনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালের পহেলা ডিসেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
ব্যাংকে কাজের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশও তৈরী করা হচ্ছে। দেশের ৫৯টি তপশিলি ব্যাংকে কর্মরত নারী কর্মীদের জন্য ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর রয়েছে। ২৭টি ব্যাংক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। ৪৮টি তফশিলি ব্যাংকের লৈঙ্গিক হয়রানি বন্ধের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। অবশ্য ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। পাশাপাশি নারী কর্মীদের চাকরি বদলের প্রবণতা কিংবা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতাও আগের চেয়ে কমেছে।