Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুদর্শন পুরুষ বনাম সুখী নারী

সুখী-অসুখী নির্ভর করে মানুষের মনের ওপর। তবে একসঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে সুখটা নির্ভর করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালোবাসা ও যত্নের ভিত্তিতে। কিন্তু আজকাল দাম্পত্য সম্পর্কে নানাবিধ সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুধু তাই নয় বর্তমান সময়ে বিচ্ছেদের হারও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেক্ষেত্রে বলাই চলে দাম্পত্য সম্পর্কে পারস্পরিক সহোযোগিতার বদলে নানাবিধ জটিলতা দেখা দিচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে আবেগ-অনুভূতি-শ্রদ্ধা-সম্মানের যথেষ্ট অভাব সাম্প্রতি। বরং বাইরের জগতে স্বামী-স্ত্রী নিজেকে যতটা সুষ্ঠুভাবে উপস্থাপনের চেষ্টায় ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে সেবিষয়ে ততটা তাগিদ নেই। কিন্তু সম্প্রতি একটি গবেষণায় অবাক করা কিছু তথ্য উঠে এসেছে। স্ত্রীর চেয়ে কম সুন্দর পুরুষের সঙ্গে নারীরা সুখী বেশি।

ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির নতুন এক গবেষণা বলছে,
যে সম্পর্কে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি সুন্দরী হয়, সেখানে সফলতার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গবেষকরা টেক্সাসে সম্প্রতি বিবাহিত ১১৩ জন দম্পতিকে বিশ্লেষণ করেন।

এই জরিপে স্বামী-স্ত্রীকে তাদের চেহারার ওপর ভিত্তি করে নম্বর দেওয়া হয়। দেখা যায়, স্ত্রীর চেয়ে সৌন্দর্যে পিছিয়ে থাকা স্বামীরা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বেশি যত্নবান। উপহার দেওয়া, ঘরের কাজ করা, নিজেকে নতুন করে উপস্থাপন করা, ভালোবাসার নিত্যনতুন ধরণ বের করায় তাদের প্রচেষ্টা থাকে একটু বেশিই।

গবেষণায় বলা হয় কম আকর্ষণীয় দেখতে স্বামীরা সম্পর্কে বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। একইসঙ্গে তারা স্ত্রীর সৌন্দর্যের মর্ম বুঝতে পেরে স্ত্রীকে খুশি করতেও বেশি ব্যস্ত থাকে। গবেষণায় আরও দেখা যায়, দম্পতির মধ্যে পুরুষ সঙ্গী বেশি আকর্ষণীয় হলে হীনমন্যতায় ভোগেন নারী সঙ্গী। যা তাদের সম্পর্কে নানাভাবে খারাপ প্রভাব ফেলে।

ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক তানিয়া রেনোল্ডস জানান, গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় আকর্ষণীয় চেহারার স্বামীর জন্য সম্পর্কে খারাপ প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে কম আকর্ষণীয় দেখতে স্বামীরা স্ত্রীকে খুশি রাখতে ব্যস্ত থাকেন। গবেষণার ফল অনুযায়ী যে তথ্য উঠে এসেছে আমাদের সমাজের দিকে তাকালেও এর সত্যতা পরিলক্ষিত হয়। সত্যিকার অর্থে নারীরা সৌন্দর্য পিপাসু নয় এটা বলা ভুল। তবে নারীরা সৌন্দর্যকে খুঁজে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। সেটা পুরুষের বাহ্যিকরূপ হতে পারে, ব্যক্তিত্বে, জ্ঞান, জীবনযাপন পদ্ধতির ভিত্তিতে হতে পারে। অর্থাৎ নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টা সামগ্রিক হয়ে পড়ে তখন। কারণ সঙ্গীর মধ্যে তারা সৌন্দর্য খুঁজে নিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে সমাজের আপাতদৃষ্টিকোণ থেকে আজও নারীর সৌন্দর্যের মাপকাঠি তার বাহ্যিক রূপ। ফলে পুরুষের মাঝে এই মনোভাবাই গড়ে উঠেছে যে, নারীর সৌন্দর্য রূপে।

সমাজ অনুযায়ী নারীর সৌন্দর্যের মুগ্ধতাও গায়ের রঙে আঁটকে আছে৷ এক্ষেত্রে যখন পুরুষের এই মনোবাসনা পূর্ণ হয় তখন তিনি তার সঙ্গিনীকে সুন্দরীর আখ্যা দিচ্ছেন। এবং পুরুষটি সমাজের মাপকাঠিতে কম সুন্দর হওয়ায় স্ত্রীর প্রতি বেশিই যত্নশীল হয়ে পড়ছেন। যাতে তার সুন্দরী বউটি কোনো একটি দিক নিয়ে স্বামীর প্রতি তুষ্ট থাকতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে স্বামীর তুলনায় যখন স্ত্রী অসুন্দর বা ততটা সুন্দরী নন তখন পাড়া-প্রতিবেশী সমাজের নানা কটুকথা সহ্য করতে হয়। এজন্য নারীটিকে তার রূপ-মাধুর্যের প্রতি হতাশ হতে দেখা যায়।

মূলত এই দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতারই ফল। নাহলে স্বামী-স্ত্রীর রূপ নয় বরং গুণমুগ্ধ হওয়াই শ্রেয়। যদি দুজনের পারস্পরিক ভালোবাসা-শ্রদ্ধা -সম্মান দৃঢ় হয়, উভয়েই পরস্পরের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, দাম্পত্য সম্পর্ককে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করে তবে অবশ্যই সেখানে অসুখী হওয়ার কারণ কমে আসবে।

সৌন্দর্যের ভিত্তিতে যে গবেষণার ফল তা মূলত এ সমাজের মানসিকতাকে তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়। তবে এই ধারণাকে বদলে দিতে হবে নতুবা সব পুরুষই খুঁজে খুঁজে সুন্দরী খ্যাত নারীর পিছনে আরও ততোধিক হুমড়ি খেয়ে পড়বে। যা আধুনিক যুগে এসেও হচ্ছে! নারী-পুরুষের বাহ্যিকগুণে নয় বরং অন্তরের সৌন্দর্য আলোকিত হওয়াই উত্তম। নাহলে দাম্পত্য সম্পর্কের মাঝে রূপ থাকলেও একটি সময় গিয়ে ভালোবাসা-আশ্রয়ের জায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ