Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীবান্ধব সমাজ গড়তে দাও

আমাদের সমাজে আজও নারীর প্রতি নানাবিধ অবিচার- অন্যায় করা হয়। নারী-পুরুষের মাঝে বিস্তর বৈষম্য এখনো। পুরুষ তার সহযোগী হিসেবে নারীকে দেখে না। উল্টো নারীর প্রতি হিংস্র হয়ে ওঠে। নারীকে বারবার আঘাত করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞানে সমৃদ্ধ মানুষ মনের দিক থেকে প্রগতিশীল নয়। তারা কন্যাসন্তানের জন্য বাধার দেয়াল তুলে রেখেছে। যদিও আজকাল নারীরা বেশ অগ্রসর হচ্ছে, তবু সমাজে তেমন কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। আজও পরিবারে কন্যাশিশুকে অনেকটা একঘরে করে রাখা হয়। অর্থাৎ মেয়ে হয়ে জন্মালে তার স্বাভাবিক বিকাশ হয় না। বরং পরিবার- সমাজ অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করে তাকে বনসাই রূপে তৈরি করে।

পরিবার থেকেই নারীর প্রতি বৈষম্যের সৃষ্টি। পিতা- মাতা সন্তানের মঙ্গল প্রার্থনা করলেও তাদের কিঞ্চিৎ দৃষ্টি কম থাকে ছেলে সন্তানের চেয়ে। ফলে ছেলে যতটা তার মতো করে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে পারে মেয়েরা তা পারে না। আর এই সমাজের যেসব বৈষম্য আজও লক্ষণীয় তার সবটাই পরিবার থেকে উদ্ভূত। একজন শিশু যখন বেড়ে ওঠে তখন সে যদি নিজের বোনটার সঙ্গে একই মাপকাঠিতে বেড়ে ওঠে তবে মনের কোণে ছেলে হয়ে জন্মানোর আত্মগরিমাটাই সৃষ্টি হবে না। অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ে বেড়েই উঠবে মানুষ হয়ে। কোনো লিঙ্গজনিত বিভেদের ভিত্তিতে নয়। আর যখন সন্তানেরা সম শিক্ষায় শিক্ষিত হবে তখনই তারা মানুষ রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

আমাদের সমাজ আজও নারীবান্ধব নয়। অর্থাৎ কোনো কাজেই নারীকে তার যোগ্য মর্যাদা- সম্মান দেওয়া হয় না। মা তার সন্তানকে বড় করতে নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দেন।তবু সন্তান মায়ের যোগ্য সম্মান- মর্যাদা দিতে চান না। মূলত যে মায়েরা গৃহিণী তাদের কাজের যেন এ সমাজে কোনোই মূল্যায়ন নেই। কিন্তু এই নারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে একটি পরিবার দাঁড়িয়ে থাকে। যেই নারীরা পরিবারের ভিত্তি স্থাপন করেন তাদের বারবার হেয় করা হয় এ সমাজে। কিন্তু যদি এই মায়েরা তথা নারীরা তার পূর্ণ সম্মান-মর্যাদা পায় তবে তিনি যেমন কাজ করে ক্লান্ত হবেন না তেমনই আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুরও তুলবেন। কারণ প্রত্যেকেই চায় সম্মান- যোগ্য মর্যাদা। যার ফল ইতিবাচক। তবে এ সমাজ যাদের ওপর নির্ভর করে চলছে সেই নারীর জন্য সুস্থ পরিবেশ গড়ে ওঠেনি।

সমাজে নারীর পূর্ণ প্রতিষ্ঠা পেতে নারীর মত, পথ, চালচলন, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা রক্ষিত হলে তবেই আমরা কল্যাণময় পৃথিবী পাবো

নারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে আগে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। যদি মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করার সক্ষমতা আমাদের মাঝে গড়ে ওঠে তবে কে পুরুষ, কে নারী তা বিবেচ্য হবে না। প্রকৃত অর্থে পৃথিবীর এত দ্বন্দ্ব-কলহ-ফ্যাসাদের সৃষ্টি প্রাপ্য সম্মানের অভাবে। অর্থাৎ যে বা যারা যেপ্রকার সম্মানের উপযুক্ত তা করা হয় না। পুরুষ জাতি যদি নারীকে যোগ্য মর্যাদা দিতো তবে অনেক সমস্যা কমে যেত।

সমাজকে সুস্থ-স্বাভাবিক কল্যাণময় করে তুলতে হলে প্রথমেই নিজেদের বোধের বিকাশ ঘটাতে হবে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা উগরে হাজারখানা সার্টিফিকেট কব্জা করলেই প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তার জন্য পারিবারিক শিক্ষা প্রধান। তবে তার পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক শিক্ষাও বিশেষভাবে জরুরি। কথায় আছে; সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস/ অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। তাই পরিবারকে নজর দিতে হবে সন্তান কোন পরিবেশে এবং কাদের সংস্পর্শে বেড়ে উঠছে। সন্তানকে যদি সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায় তবে তারা ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে বদলাতে সক্ষম হবে। আর মানুষ যদি নিজের মনুষ্যত্ব- বিবেক- নৈতিক দীক্ষায় দীক্ষিত হয় তবে যেকোনো কাজ করার আগে ভালো-মন্দের বিভেদ সম্পর্কে অবগত হতে সক্ষম হবে।

এ সমাজে নারী-পুরুষের এমন বিভেদমূলক নানাবিধ মন্তব্য-প্রতিবন্ধকতা সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বাধাগ্রস্ত করছে। নারীরা যেমনভাবে তাদের জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেভাবে যদি সমাজস্বীকৃত হয় তবে আর কোনো হাঙ্গামা থাকবে না। নারীবান্ধব সমাজ গড়ে তোলাটাই মুখ্য। সমাজে নারীর পূর্ণ প্রতিষ্ঠা পেতে নারীর মত, পথ, চালচলন, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা রক্ষিত হলে তবেই আমরা কল্যাণময় পৃথিবী পাবো। তাই সব নেতিবাচকতাকে দূরে ঠেলে নারীবান্ধব সমাজ গড়ে তোলে জরুরি।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ