মে দিবস হোক মায়েরও!
বেঁচে থাকার জন্য শ্রম অতি গুরুত্বপূর্ণ। কোন রকম কাজ না করে বেঁচে থাকা যায় না৷ আর পৃথিবীতে কয়েকশো প্রকারের শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে যারা সবাই কিছু না কিছু উপার্জনশীল কর্ম করছে। এই শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সম্মান জানিয়ে মে মাসের ১ তারিখকে আন্তর্জাতিক মে দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
কিন্তু এত এত শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে একটা পেশা তো বাকি থেকে গেলো যে কোনোরকম বিনিময় ছাড়া, কোন বেতন ছাড়া মাঝেমধ্যে তো সম্মান ছাড়াও আজীবন ধরে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। হ্যাঁ, ঠিকই ভাবছেন মায়ের কথা বলছি।
রোজ সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠার আগেই মানুষটি উঠে সকালের নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে ফেলেন। বাসার কে স্কুলে যাবে, কার কটায় কলেজ আছে, অফিস যাওয়ার আগে বাবার খাবার, বাসায় অসুস্থ দাদা/ দাদীর কখন ঔষধের সময়, কখন খাওয়ার সময়, দুবেলার রান্না থেকে শুরু করে সমস্ত দিক সামলে রাখেন ক্লান্তিহীন ভাবে এই মানুষটি।
এই যে বিনা পারিশ্রমিকে এত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, কখনো হয়তো এই মানুষটিকে জিজ্ঞেস করাও হয় না তার কিসে সুবিধা অসুবিধা হয়। কোথাও কোথাও তাকে কতটা সম্মান দেওয়া হচ্ছে, তা দেখার বিনিময়ে সহ্য করতে হয় অপমান, লাঞ্ছনা। যে সন্তানকে বুক দিয়ে আগলে বড় করলেন সে সন্তান একদিন মাকে রেখে আসলো বৃদ্ধাশ্রমে। অথবা কতদিন মা কোন কাজে না করেছে বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেছেন, রাগ করে মাকে ক কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। কিংবা যে মা ঘর সামলে আবার চাকরিও করছেন তাকে কতদিন অভিযোগ জানিয়েছেন মায়ের জীবনে কোন অবদান নেই, মা সময় দেননি কোনোদিন। কিংবা সন্তানদের সামনেই কদিন ঝগড়া হয়েছে বলে বাবা বলেই ফেললেন মাকে কি করে সারাদিন, কোন কাজেই তো আসেনা।
আসলেই কি এই আটপৌরে গৃহিণী মা কোন কাজে আসেনা? আমাদের এই পৃথিবীর আলো দেখানো মা কিছুই করেনা? রোজ বাবার অফিসের খাবার, জামাকাপড় সব তৈরি করে পুরো সংসার সামলে রাখা মা কিছুই করছেন না? নিজের জীবনটা সংসারে উৎসর্গ করেও মা কিছু করতে পারেন না?
নিজের বিবেক ঠিক কি বলছে এই মুহূর্তে? মায়ের শ্রমকে কতটা সম্মান জানিয়েছেন এতদিন? নাকি ভাবছেন মা আর কি করে আমাদের জন্য? মনে করতে পারছেন কোন কোন দিন কোন কোন কারণে মাকে কতটা আঘাত করে ছোট করে কথা বলেছেন?
কিন্তু ভাবুন তো শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সম্মান, মর্যাদা দিতে গেলে প্রথম কাতারেই কি মায়ের থাকার কথা নয়! অন্তত এই মে দিবসে মায়ের অবদানকে, মায়ের শ্রমকে সম্মান জানান। আপনার জীবনে মায়ের অবদান কে স্বীকার করুন। মাকে তার যোগ্য সম্মান দিয়ে আত্মতৃপ্তির জায়গা করে দিন। কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া যে মানুষটি আপনাকে একটা জীবন দিয়েছে, যে মানুষটি আপনাকে একটা পরিবার দিয়েছে তাঁকে তাঁর সম্মানটা দিন।