ডেঙ্গু প্রতিরোধে গর্ভবতী নারীর যত্নে করণীয়
পুরো দেশজুড়ে ডেঙ্গুর আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে। গ্রাম শহর কোথাও কেউ ডেঙ্গু থেকে রেহাই পাচ্ছে না৷ তবে এ সময়টা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিপজ্জনক। কারণ খুব স্বাভাবিকভাবেই এই সময়টা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম থাকে। তাই অন্যদের থেকে গর্ভবতী মায়েদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শক সিন্ড্রোমে যাওয়ার আশঙ্কাও বেশি। যে-সব পরিবারে গর্ভবতী নারী রয়েছে, তাদের অন্য সবার থেকে অনেক বেশি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কেন গর্ভবতী মায়েদের জটিলতা সৃষ্টি হয়?
একজন নারী সন্তান ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ধরনের শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হন। যেমন: বমি কিংবা বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, দুর্বল অনুভূতি হওয়া, খাবারের রুচি কমে যাওয়া ইত্যাদি। আর শুরুর দিকে অনেকের প্রচুর বমি হয়। ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এত শারীরিক সমস্যা মধ্যে আবার যদি একজন নারী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে তার জটিলতা আরও অনেক বেশি বেড়ে যায়।
মায়ের ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব পরে গর্ভে থাকা সন্তানের ওপর। সন্তান সঠিকভাবে অক্সিজেন পায় না। ডেঙ্গুর ভাইরাস গর্ভের শিশুর শরীরে ছড়িয়ে পরলে মস্তিষ্কে নানা সমস্যা হতে পারে৷ এতে শিশু বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। অনেক সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত মায়ে গর্ভের শিশুর শরীরে জ্বর ও র্যাশ দেখা যায়। যদি গর্ভধারণের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, তবে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এর ফলে পুষ্টির অভাবে গর্ভের শিশু মারা যেতে পারে। মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাস যাওয়ার ঘটনাও বিরল না। এ সময় নারীদের শরীর থেকে প্রচুর প্রোটিন বের হয়ে যায়৷ উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এ সমস্যা আরো জটিলকার ধারণ করে। অনেক গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে চলে যায়। আবার গর্ভধারণের শেষের দিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অনেক সময় অপারেশনের প্রয়োজন হয়। তখন অপারেশনের ফলে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়৷
গর্ভবতী মা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেলে করণীয়:
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীর এমনি প্রায় সময় খারাপ থাকার কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও তারা শুরুতে গুরুত্ব দেয় না। ফলে এটি জটিল আকার ধারণ করে। এ সময়ে জ্বর আসলে কোন ভাবেই তা স্বাভাবিক জ্বর ভেবে ঘরে বসে থাকা যাবে না। কারণ যেকোনো রোগের প্রাথমিক অবস্থায় যদি চিকিৎসা শুরু হয়, তবে অনেক জটিলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়৷ তাই শরীরে জ্বর অনুভূত হলেই হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাস আছে কি না।
ডেঙ্গুর ভাইরাস পজেটিভ এলে গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। ডেঙ্গু ধরা পড়লে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও কাছের মানুষদের জানিয়ে রাখুন। যেন তারা রক্তের প্রয়োজন হলে বা অন্যান্য যেকোনো সমস্যার সময়ে এগিয়ে আসতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখের মতো কোনো সমস্যা থাকে তবে তা চিকিৎসককে আগে থেকে জানিয়ে রাখুন।
সতর্কতা অবলম্বন : বাড়িতে গর্ভবতী মা থাকলে তার রুমের জানালা বিকাল হলেই বন্ধ করে দিন। জানালায় নেট লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে, যেন ঘরে মশা প্রবেশ করতে না পারে দিনের বেলা ঘুমালে মশারি টানিয়ে নিন। প্রয়োজনে মোজা পরে থাকতে হবে। মশাবিরোধী লোশন কিংবা তেল ব্যবহার করুন৷ বাড়ি আশেপাশে কোথাও পানি জমে আছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে। এই সময়টা ঘরে গাছ থাকলে তা ছাদে কিংবা বাইরে নিয়ে রাখুন এবং খেয়াল রাখতে হবে টবের মধ্যে যেন পানি জমে না থাকে৷ বাড়ি ও বাড়ির আশেপাশের স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। কোথাও ডাবের খোসা, ভাঙা ফুলদানি দেখলে তা সরিয়ে ফেলুন।