Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখানে শহর চোখভরা জলেও মুচকি হাসে

আমাদের অর্থনীতির চাকার অগ্রগতি নাকি ক’বছর আগেই আমাদের ‘এশিয়ার বাঘ’ খেতাব এনে দিয়েছে। তাহলে বাস্তব চিত্র কেন এমন গড়মিলের? প্রতি রাতে কম্বল কিংবা চাদর মুড়ি দিয়ে শহরের ফুটপাথে দেখা মিলে অসংখ্য মানুষের। ছিন্নমূল মানুষ থেকে এখন ছিন্নমূল পরিবারের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। পরিবার একটি সমাজের সাংগঠনিক একক। এখান থেকেই আমাদের বিকাশ, আমাদের মনন গড়ে ওঠা। কিন্তু ফুটপাথের পরিবার কি প্রাতিষ্ঠানিক পরিবারের সংজ্ঞাকে ধারণ করে। অথচ একটি স্থিরচিত্র আমাদের কি দারুণ লাগে। যেমন আজকের এই লেখাটিতে আমি বুঝে উঠতেই পারছিনা একে কি বলা যায়। 

 

পরিবার থেকেই মানুষ ক্রমশ তাদের মৌলিক চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করে। কিন্তু যেখানে পরিবারের বাসস্থানের সংকট প্রবল সেখানে অস্তিত্ব রক্ষাই একমাত্র লক্ষ্য। অথচ শহরের উজ্জ্বল আলোর নিচেই তাদের বাস। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে ফুট ওভার ব্রিজের সংখ্যা বাড়ছে। উন্নত বিশ্বের হিসেবে রাস্তা পারাপারের জন্যে এটি সঠিক মাধ্যম নয়। সঠিক কিনা জানা নেই, তবে এই ব্রিজগুলো হয়ে উঠছে অনেক পরিবারের জন্যে বাসস্থান। 

 

এখানে শহর চোখভরা জলেও মুচকি হাসে

 

রাস্তাজুড়ে অসংখ্য মানুষের প্রতিদিন চলাচল। নিজেদের ব্যস্ত জীবন, আলসে জীবন, আরামের জীবন – জীবনের যেকোন প্রকৃতির মাঝেই সকলে ফিরে যেতে পারে একটি আরামদায়ক ঘরে। ঘরের সংজ্ঞা যাই হোক, বোবা বাক্সের নিরাপত্তায় সকলেই বাস করে। সামান্য কাঠের বুহ্য আর প্রিয়জনদের উষ্ণতা। কিন্তু ফুটপাথে কিংবা ওভার ব্রিজে নেই নিরাপত্তা। আছে শুধু প্রিয়জন। সেই প্রিয়জনদের সাথে নিজের  উষ্ণতা ছিটিয়ে বেঁচে থাকা। দু’একটা স্থিরচিত্র আমরা নিজেদের ছবি তালুবন্দি করার ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে তুলে আনি। ছবিগুলো দেখে আমরা খুশি হই। কিন্তু সত্যিই কি তাই?

 

আসলে এই স্থিরচিত্রগুলো থেকে আমরা তুলে আনতে চাই অসঙ্গতি। আমাদের এই সুন্দর পরিবারের ছবি থেকে কি অসঙ্গতি আমরা বুঝতে পারি? এখানে একটি পরিবারকে একমুঠো পেটের আশায় বাঁচতে হয়। সেই গল্পের খবর আমরা জানিনা। হয়তো মাঝেমধ্যে তারা আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে কিছুটা সাহায্য আশা করে। কেউ হয়তো দেয় অথবা অনেকেই দায় এড়িয়ে চলে আসে। কিন্তু যখন সমাজ এভাবে ছিন্নমূলদের এড়িয়ে চিন্তা করতে শুরু করে, তখন শহর কান্না করে। সেটা সামান্য মুচকি হাসি কিংবা স্থিরচিত্রে আটকে থাকে। 

 

এখানে শহর চোখভরা জলেও মুচকি হাসে

 

এই পথেই পরিবারের অনেক সদস্য ছেলেবেলা হারিয়ে বাঁচে। তাদের জগত হয়ে উঠে ক্ষুদ্র। অথচ এখানে রাস্তা জুড়ে মানুষ, মানুষ এবং শুধুই মানুষ। এই মানুষের ভীড়েই প্রকাশ্যে বেঁচে থাকে পরিবার। এখানে কোন অন্দরমহল নেই। হয়তো এখানেও কিছু স্বপ্ন আছে। উড়তে থাকে স্বপ্ন মাখা রঙ বেরঙের মিথ্যে ফানুশ। এরাও স্বপ্ন দেখতে পারে। তাইতো এখনো পরিবার হয়ে বেঁচে আছে। এখনো হাসতে পারে কারণ প্রিয়জনের উষ্ণতা তাদের জিইয়ে রেখেছে। 

 

বাস্তব চিত্রটুকু কি আমরা কখনো বুঝতে পারছি? কেন একটি পরিবার এভাবে ছিন্নমূল? আমাদের সমাজ কোথায় এগিয়ে যাচ্ছে? এভাবেই কি আস্তে আস্তে দখল হয়ে যাবে সব? নিরাপত্তার বেষ্টনী হারিয়ে ফেলতে শুরু করবে অসংখ্য মানুষ। ছিন্নমূল মানুষদের সাথে আমাদের পার্থক্য আসলে কোথায়?

 

এখানে শহর চোখভরা জলেও মুচকি হাসে

 

যার জীবনের মৌলিক চাহিদার সবগুলোই পূরণ হতে থাকে, তারা হয়তো বাড়ি ফিরে খুনসুটি করতে পারে। নিজের জীবনসঙ্গীর সাথে মনের কল্পনার মিশেল দিয়ে খুশি করতে জানে। হয়তো রাতে বলতে জানে, তোমরা আছো বলেই বাঁচি। ভালোবাসার কথা বলা যায়। কোলে তুলে নেয়া যায় সন্তানকে। তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়। 

 

কিন্তু ছিন্নমূল এই মানুষগুলোর কাছে ভালোবাসার গল্প নেই। তারা একজন আরেকজনকে কখনই হয়তো বলেনা ভালোবাসি। তাহলে তারা কি একে অপরের সাথে অভিমান করেনা? এই অভিমান নেই বলেই হয়তো সমাজের অসঙ্গতিটুকু নিয়ে আমরাও ভাবিনা তারাও ভাবেনা। সমাজের সকল মানুষের দায় আমাদের সকলেরই। কারণ আমরা কর দিচ্ছি, আমরাই সমাজের দায় পালনের জন্যে প্রতিনিধি নির্বাচন করেছি। আর এরাও আমাদের সমাজের অংশ। 

 

এখানে শহর চোখভরা জলেও মুচকি হাসে

 

ছিন্নমূল পরিবারের বৃদ্ধি সত্যিই চিন্তা করার মতো। বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখন থেকেই ভাবা শুরু করতে হবে। বুঝতে হবে এই মানুষগুলো কি নিয়ে বাঁচে? হয়তো তাদের জীবনে স্বপ্ন নেই, একে অপরের সাথে ভালোবাসার গল্প নেই। তবু তো এরা হাসে। হয়তো চোখেভরা জলেও কখনো মুচকি হাসে। আমাদের দৃষ্টি একবার এদিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত। নাহয়, সমাজের অসঙ্গতি বাধ ভেঙে ডুবিয়ে দেবে প্রবল সামাজিক সংকটের বন্যায়। 
 

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ