আরব আমিরাতে গৃহকর্মী নিয়োগে সতর্কবার্তা আশার আলো দেখাবে
দেশে কর্মসংস্থানের অপ্রতুল সুযোগ থাকায় অনেকেই প্রবাসে পাড়ি জমান। ভিটেমাটি বেঁচে একটু খেয়ে-পরে বাঁচার তাগিদে, কিঞ্চিৎ উন্নত জীবনের আশায় দেশের মায়া ত্যাগ করে বিদেশের মাটিতে আশ্রয় নেয়। তবে সেই আশ্রয় অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দেয়! বিশেষ করে প্রবাসে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত- নিগৃহীত হন। সম্প্রতি প্রবাসে কর্মরত নারীদের এমন নির্যাতনের ঘটনা অহরহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের করুণ আর্তি হৃদয়কে বিদারিত করে! তবে এক্ষেত্রে নেই কোনো সুগঠিত কর্ম পরিকল্পনা বা তৎপরতা!
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী পাঠানো হয় আমাদের দেশ থেকে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে নারীরা কর্মে যুক্ত হলেও বিভিন্ন সময় এসব নারীদের নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মীরা কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া এখন নিত্য ঘটনা। শুধু তাই নয় অনেক নারীই বাঁচার আকুতি নিয়ে দেশের কাছে সাহায্য প্রার্থী হয়। আবার কেউবা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসতেও বাধ্য হয়।
সম্প্রতি আরব আমিরাতের এমওএইচআরই সংস্থার আহ্বান জনমনে সাড়া ফেলেছে। অননুমোদিত এজেন্সি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গৃহকর্মী নিয়োগের বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যান্ড এমিরেটাইজেশন মিনিস্ট্রি (এমওএইচআরই)। এই সংস্থা দেশটির বাসিন্দাদের শুধু মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এজেন্সি থেকে সাহায্যকর্মী নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন । গতকাল ১৪ মার্চ মন্ত্রণালয়ের এক টুইটার পোস্টে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
সেখানে নিয়োগকর্তা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিক ও বাসিন্দাদের এমওএইচআরই-অনুমোদিত সংস্থা থেকে কর্মীর নিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া অবৈধভাবে কর্মী নিয়োগ দেয় এমন সোশ্যাল মিডিয়া পেজ এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়। পরিষেবা সংস্থার নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য নির্ধারিত নম্বর দেয়া হয়। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে রয়েছে অনুমোদিত সংস্থার তালিকা।
মন্ত্রণালয় জানায়, অনুমোদনহীন নিয়োগের ক্ষেত্রে গৃহকর্মীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কোনো প্রমাণ থাকে না। তখন নিয়োগকর্তা ও তার পরিবারের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া গৃহকর্মী আইন লঙ্ঘনকারীও হতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন গার্হস্থ্য আইন গত ডিসেম্বরে কার্যকর হয়েছে। এতে শুধু লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্থা গার্হস্থ্য সহায়তা সেবার অনুমতি পেয়েছে।
এমওএইচআরই অনুমোদিত এজেন্সির তালিকা বলে নিয়োগ প্রাপ্ত গৃহকর্মীদের সব তথ্যই দেশটিতে নিবন্ধ থাকবে। এর ফলে চোরাই পথে বা দালালচক্রের মাধ্যমে প্রবাসে যাওয়ার সংখ্যা কমে আসবে। এরচেয়ে বড় কথা হলো যেহেতু এসব দেশে গৃহকর্মে নিযুক্ত হন বেশি নারীরা ফলে নারীরা যদি সুষ্ঠু পথে, সঠিকভাবে কর্মে নিযুক্ত হন তবে দুই দেশেরই দায়বদ্ধতা থাকবে। অর্থাৎ যে দেশ থেকে গৃহকর্মী যাবেন তাদের একটা তালিকা থাকবে। এর ফলে কিছুটা হলেও নির্যাতন, দালাল চক্রের হয়রানি, চোরাই পথে প্রবাসে পাড়ি জমানো কিছুটা হলেও কমে আসবে আশাকরা যায়।
তবে এলক্ষে অবশ্যই বহির্বিশ্বের সব দেশের কূটনৈতিক চুক্তির কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন। এবং নিয়ম-নীতির লঙ্ঘন না করে জনগণকে জনসম্পদে পরিণত করতে হবে৷ তাহলে অদূর ভবিষ্যতে প্রবাসে নারী নির্যাতন এবং নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা অনেকাংশে লাঘব হবে।