বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্ধ্যাত্ব
সম্প্রতি দেশে বন্ধ্যাত্ব উল্লেখ্যহারে বেড়ে গেছে। বায়ুদূষণ ও রাস্তার ট্রাফিকের শব্দ দূষণের মতো দূষণগুলো দীর্ঘমেয়াদে পুরুষ ও নারীর প্রজনন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি বিএমজে জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে ২.৫ মাত্রার শব্দ কণার সংস্পর্শে আসা বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে তাদের বয়সের সময়সীমা পাওয়া গেছে ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। অন্যদিকে, ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে রাস্তার ট্রাফিকের শব্দ বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
গবেষকরা বলেন, ২.৫ মাত্রার বায়ুদূষণে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যা ৩০-৩৬.৯ এবং ৩৭-৪৫ বছরের দুই বয়সসীমায় এই ফলাফল প্রায় একই রকম।
নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রাস্তার ট্রাফিকের শব্দদূষণে ৩৫-৪৫ বছর বয়সী নারীদের উর্বরতায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে ৩০-৩৪.৯ বছর বয়সীদের ওপর এর কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি।
পুরুষদের উর্বরতায় বায়ুদূষণের প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২.৫ মাত্রার কণাগুলো শরীরে প্রবেশ করে রক্তে মিশে যায় এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে।২.৫ মাত্রার বায়ুদূষণ ক্ষতিকারক ভারী ধাতু ও ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস থাকে। এটি শুক্রাণু সংখ্যা কমিয়ে দেয় এবং এর গতিশীলতা নষ্ট করে।একই সঙ্গে এই উপাদানটি টেস্টোস্টেরনের মতো প্রজনন হরমোনের উৎপাদনকে ব্যাহত করে এবং প্রজনন অঙ্গগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করে বলে জানা গেছে।
নারীদের উর্বরতায় রাস্তার শব্দদূষণের প্রভাব
রাস্তার শব্দ নারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। পরিবেশগত এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয় ৩৫ বছরের পরে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
৫৫ ডেসিবেলের ওপরে ক্রমাগত শব্দদূষণ মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে বাড়িয়ে দেয় কর্টিসলের মাত্রা। এর ফলে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মতো প্রজনন হরমোনগুলো ব্যাহত হয়। এছাড়া হতে পারে অনিয়মিত মাসিক চক্র বা অ্যানোভুলেশন (ডিম্বস্রাবের অনুপস্থিতি) এবং অ্যামেনোরিয়া (ঋতুস্রাবের অনুপস্থিতি) মতো সমস্যা।
ঘুমের ব্যাঘাত
শব্দদূষণের ফলে ঘুম কম হওয়ার কারণে মেলাটোনিন কমে যায়। এটি ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতাও কমিয়ে দেয়।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস
শব্দদূষণের ফলে ডিম্বাণুর মান এবং গর্ভাশয়ের গ্রহণক্ষমতা কমে যায়।
প্রতিরোধে কী করবেন
শহরের পরিবেশ দূষণ ও শব্দদূষণের প্রভাব কমাতে কয়েকটি পরামর্শ।দূষণের মাত্রা বেশি হলে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করুন। এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার এবং ঘরে বায়ু বিশুদ্ধকারী গাছ রাখুন। বাহিরের দূষিত বায়ু ও শব্দ যাতে ঘরে প্রবেশ না করে সে জন্য ডাবল-গ্লেজড জানালা, ভারী পর্দা ও সাউন্ডপ্রুফ প্যানেল ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সুত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস