প্লাস্টিক পলিথিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা
করোনার পর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের সংস্থা জানিয়েছিল মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে ১৪ হাজার ৫০০ টন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক বর্জা বেড়েছিল। আর এসব বর্জের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল সার্জিক্যাল মাস্ক, পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, পলিথিন ব্যাগ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল। করোনার সময় বিষয়টি অবশ্যই স্বাভাবিক মনে হলেও প্লাস্টিকের ব্যবহারের দিকটি আমাদের চিন্তা করা দরকার। দৈনন্দিন প্রয়োজনে প্লাস্টিক অনেক জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী একবার ব্যবহার করা হয়, এমন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য বেশি ব্যবহার করে। অর্থাৎ প্লাস্টিক সিঙ্গেল ইউজড হওয়ায় প্রতিদিন তা বর্জ্য হিসেবে জমছে। প্লাস্টিক যেহেতু পচনশীল নয়, তাই ব্যবহারের পর যে-সব প্লাস্টিক পণ্য ফেলে দেওয়া হয়, তার অধিকাংশই যুগের পর যুগ একইভাবে পরিবেশে টিকে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যন্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এক গবেষণায় বলেছে, মুদি দোকান থেকে কেনা পণ্য যহন করার জন্য যেসব ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো প্রকৃতিতে মিশে যেতে ২০ বছর সময় লাগে। চা, কফি, জুস কিংবা কোমল পানীয়ের জন্য যেসব প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। আর ডায়াপার এবং প্লাস্টিক বোতল ৪৫০ বছর পর্যন্ত পচে না। অর্থাৎ প্লাস্টিক প্রকৃতিতে মাটিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা এখানেই বোধগম্য। আবার প্লাস্টিক যে মাটির জন্যই ক্ষতিকর তা কিন্তু নয়। প্লাস্টিক জলাশয়কেও দূষিত করে। শহরের নালাও আবদ্ধ করে ফেলে। আবার এমনও হয় যে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে এলোপাথাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে। এমনটি হয় কারণ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের প্রতি আমাদের নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে বলে।
প্লাস্টিক দূষণ নানাভাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে।
প্লাস্টিকের মতো বর্জের্জর সমস্যা সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কারণ প্লাস্টিক নানাভাবে সমুদ্রে চলে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য ও সমুদ্রসীমার সংকট তৈরি হয়। এসব সমস্যার কারণেই সারা বিশ্ব রি-ইউজের দিকে বেশি জোর দিচ্ছে। রিসাইকেল এক বিষয়, আর রিইউজ আরেক জিনিস। নিত্যদিনের প্রয়োজনে আমাদের এমন কিছু পণ্য ব্যবহার করা দরকার, যেগুলো আবার ব্যবহার করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিটি হেলথ বিষয়টিকে সবিস্তারে ব্যখ্যা করেছে। মূলত আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহার্য অনেক কিছুতেই আমরা সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার করছি যা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। পানি খেতে হলে সিঙ্গেল কাপ। আবার রাস্তায় প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। পলিথিন ব্যাগ তো আছেই। বাড়িতেও অনেক অ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়। মূলত প্লাস্টিক বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন পণ্যকে প্রকৃতিতে পুরোপুরি উন্মুক্ত না করে দিয়ে তা পুনর্ব্যবহারের চিন্তা আমাদের অভ্যাসকে পরিবর্তিত করে। এই ইতিবাচক অভাসের চর্চাও অনেকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে মানবসৃষ্ট অভিঘাত এড়াতে সহযোগিতা করে।
বাজার প্রতিদিনই করতে হয়। আগে চটের ব্যাগ বা নানা
ধরনের ব্যাগ ব্যবহার হতো। এখন প্লাস্টিক ব্যাগই সুলভ। চাইলেই পাওয়া যায়। এসব প্লাস্টিক পরে আর ব্যবহার করা হয় না। তবে এই ব্যাগগুলো ফেলে না দিয়ে রেখে দেওয়া যায় অন্য কিছু সংরক্ষণে। কাপড় যখন আলাদা করে রাখা হয় তখন পলিথিনেই রাখা যায়। আবার বাজারে পলিথিননির্ভর না হতে চাইলেই আলাদা ব্যাগ রাখা যায়। এটা অভ্যাসের বিষয়। প্লাস্টিককে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার চেষ্টার চর্চার মধ্যেই রি-ইউজের মাহাত্ম্য। মূলত পলিথিনকে এলোপাথাড়ি ফেলে না দিয়ে তা ডাস্টবিনেই ফেলে দেওয়া উচিত। সিঙ্গেল ইউজ পারতপক্ষে দরকার না হলে ব্যবহার করা উচিত না। এমনকি কোমল পানীয়র বোতলটিকেও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। অথবা ব্যবহারযোগ্য করতে পারে। এমনভাবে তা ব্যবহার কতে হবে, যেন পুড়িয়ে বা পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে তা না থাকে।
বাড়িতে অনেক প্লায়েন্স আছে। যেগুলো দরকার সেগুলোই কিনতে হবে। ফোনের পার্টস থেকে শুরু করে চার্জারও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। রিইউজের এমন কোনো জায়গায়। বিক্রি করে দিতে হবে। কিন্তু ফেলে দেওয়া যাবে না। প্লাস্টিক ভাঙারিতে বিক্রি করা যেতে পারে। কাগজকে নানাভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যেন তা প্রকৃতিতে এলোপাথাড়ি না পড়ে থাকে। বাড়িতে ফ্লুরোসেন্ট বাতি দিয়ে বিদ্যুৎ বাঁচানোর দিকেও মনোযোগী হওয়া দরকার। রিইউজের ক্ষেত্রে শক্তির সুষম বণ্টন ও ব্যবহারের দিকেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি। ব্যাটারি, ইলেকট্রনিক বা অন্য সবকিছুই রিইউজ করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে সদিচ্ছার অভাবের বিষয়টিই বেশি বড় হয়ে দাঁড়ায়। মূল বিষয় বর্জ ব্যবস্থাপনা। উন্নত দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে এ বিষয়ে সচেতনতাই গড়েনি। এ দিকটি নিয়ে ভাবা জরুরি। কারণ ক্ষুদ্র ক্ষুজ সচেতনতাও এই মুহূর্তে জরুরি।