Skip to content

১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওমান এয়ারে নারী ক্যাপ্টেন, কর্মক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন

ওমানের জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা ‘ওমান এয়ার’ পাইলট মহা আল বালুশিকে প্রথম নারী ওমানি ক্যাপ্টেন ঘোষণা করেছে। ওমানের রাজধানী মাস্কাটে অবস্থিত ‘ওমান এয়ার’-এর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে এই নতুন পদমর্যাদা দেওয়া হয়। আল বালুশি অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ক্যাডেট প্রোগ্রাম থেকে স্নাতক শেষ করেন। এরপর ২০১০ সাল থেকেই ওমান এয়ারলাইনসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আল বালুশিই ছিলেন একমাত্র নারী, যিনি ওই সময়ে এই সময় প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনিই প্রথম নারী ওমানি, যিনি ২০১৩ সালে ‘প্রথম অফিসার’ পদে ভূষিত হন।

ওমান এয়ারের এক বিবৃতিতে আল বালুশী বলেছেন, ‘আমার সব সময় স্বপ্ন ছিল অধিনায়ক (ক্যাপ্টেন) হওয়ার। কিন্তু এটা সহজ ছিল না। তবে আমার কাছে পরিবার থেকে শুরু করে আমার প্রশিক্ষণদল এবং এয়ারলাইনসের সবার সমর্থন ছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি যা করতে পেরেছি তা আমি শেষ করেছি। এই দায়িত্ব পালন করা একটি সম্মানের বিষয়। আমি অন্য ওমানি নারীদেরও এই কেরিয়ার বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করবো।

ওমান এয়ার জানায়, এক হাজর ২৩০ ওমানি নারী কর্মচারী তাদের বিমান সংস্থায় তাদের অবদান রাখছেন। কেবিন ক্রু, ফ্লাইট অপারেশনস, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিমানবন্দর পরিষেবা, বিপণন, গ্রাহক পরিষেবা, বিক্রয়, যোগাযোগসহ বিভিন্ন পদে তাঁরা আছেন। তাহলে আমাদের দেশের নারীরা কেন পিছিয়ে থাকবে?

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের জুন মাসে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশের বিপরীতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নারী কর্মীর অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নারীরা কাজে ফাঁকি দেন কম।

ভালো করতে হলে সবাইকে কাজ শিখতে হবে, থাকতে হবে জানার আগ্রহ। ক্যারিয়ার গড়তে হলে যেমন পরিশ্রম করতে হবে, তেমনি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এই প্রতিযোগিতাপূর্ণ সময়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করা জরুরি। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে অবিরাম যোগ্যতা, দক্ষতা ও কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে।

সঠিক সময়ে সঠিক সুযোগ কাজে লাগানোর মানসিকতা থাকতে হবে। মেধা, পরিশ্রম, সবকিছুর সমন্বয়, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ, জায়গায় বসে নিজের কাজ ঠিকমতো করা—যাঁরা এগুলো করতে রাজি আছেন, তাঁরাই ভালো করবেন।

আসলে যত কথাই বলি, পরিবার থেকে যদি অনুপ্রেরণা ও সমর্থন না মেলে, তাহলে ব্যাপারটা অসম্ভব। পরিবারের মানুষগুলো ভাবেন তাদের নারীরা শিক্ষিকা, নার্স, কলেজের প্রভাষক, ব্যাংকে চাকরি করবে। তারাই বলে দেয় সংসার, স্বামী, সন্তানদের দায়িত্ব পালন করাটাই আসল মানবিক কাজ ৷ নারীটির ভাবনার গণ্ডিটা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে যায় ৷ এ রকম ভাবার পেছনের কারণ হিসেবে দেখা যায়, নারীরা চাকরি করলেও, সংসারেও সমান সময় দিতে হয় ৷

এইসব কারণে চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের পদার্পণ তুলনামূলকভাবে কম ৷ আবার কোনো নারী অফিসের কাজে কর্মস্থলের বাইরে যাবে এই বিষয়টিও অনেক পরিবার মেনে নিতে পারে না ৷ প্রমোশন হলে বদলি হয়, সংসার থেকে দূরে থাকতে হবে বলে অনেক নারী তা নিতে পারে না ৷ অনেক নারী ইঞ্জিনিয়ার ও এগ্রিকালচারিস্ট হয়েও শুধু স্বামীর ইচ্ছাতেই গৃহিণী হয়ে জীবন পার করে ৷ অনেক নারীকে সন্তান মানুষ করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে হয় ৷

নারী যদি লেখক হয়, সংসারের মানুষ বলে এত লেখালেখি করে কী হবে? সংসারের কাজে মন দাও। সমাজের মানুষ নারীদের উচ্চ পদেও দেখতে নারাজ ৷ কারণ বেশি উচ্চ পদে গেলে নারী নাকি স্বামীকে গুরুত্ব দেয় না ৷ সংসারও ভেঙে যায়। সেটা সে নিজে নির্ধারণ করতে পারবে না ৷ পরিবারের মানুষই তা নির্ধারণ করে দেবে ৷ তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বামীর সহযোগিতায় নারী অনেক উচ্চ পদে পদোন্নতি পেয়ে সাফল্য অর্জন করেছে ৷

নারীর উপার্জনে সংসার এগিয়ে যায়, তবে কেন এই রক্ষণশীল মানসিকতার জন্য নারী পিছিয়ে থাকবে? নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে সহযোগী ভাবলে কিছুটা সমস্যার সমাধান হতে পারে ৷

এত কিছুর পরও কিছু নারী কর্মদক্ষতা কাজে লাগিয়ে এখন পরিবার, সমাজ এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৷ নারী যখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়ে, দক্ষতা অনুযায়ী উপযুক্ত পেশা নির্ধারণ করতে পারবে তখন আরও বেশি উন্নতি সাধন সম্ভব।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ