Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাগো, নিখিল নারী জাগো

পরিবেশ-পরিস্থিতি বদলেছে। জীবন বদলেছে। শুধু পরিবর্তন হয়নি আমাদের নোংরা-হীন মানসিকতার। আর এই হীন মানসিকতা প্রতিনয়তই গ্রোগাসে গিলছে নারীর জীবন! কেউ কেউ শত প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়েও জীবনযুদ্ধে হেরে যাচ্ছে। এই হেরে যাওয়া মনে ভীতি সৃষ্টি করে। সন্দেহ জাগায়। কোথায় এবং কোন সমাজের বাসিন্দা আমরা! সব থাকলেও কিসের আশায় নারী নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

জীবনের প্রতি এত বিতৃষ্ণা কিভাবে? সত্যি কি মনই সব? জীবনের কোনই দাম নেই? এত প্রতিকূলতা পায়ে ঠেলে যে নারী সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সেই নারীই একসময় কিসের অভাবে আত্মঘাতী হচ্ছে। প্রাণের মায়া কেন কোনো কোনো নারীর কাছে ঠুনকো হয়ে পড়ছে? আজও কোন মায়াজালে আবদ্ধ এ নারী সমাজ।

বলা হয় নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার মাধ্যমে নারী সব প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারে। কিন্তু কেউ কেউ স্বাবলম্বী হয়েও বাইরের প্রতিকূলতার কাছে পরাজয় স্বীকার করছে। হেরে যাচ্ছে জীবনযুদ্ধে। কিন্তু কেনো এই হেরে যাওয়া? সত্যি কি তাহলে হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতি সব? নারীর জীবনকে সুন্দর, সুগঠিত, প্রতিকূলতা মুক্ত করতে স্বাবলম্বী হয়েও কিসের ঘাটতি সৃষ্টি করছে অন্তরে! একাধিক প্রশ্নের ভিড় করে মনে।

জীবনের সব সমস্যার সমাধান আছে। সময়ের ব্যবধান ব্যথা প্রশমিত করে। কিন্তু এ সমাজ সেই ক্ষতকে বারবার খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে। একশ্রেণির হীন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ দুর্বলতাকে মনে করিয়ে দিয়ে বিকৃত শান্তি পায়। কিন্তু এ শ্রেণির বিকৃত শান্তি অন্যের জীবনকে বিষাক্ত করে তোলে অনায়সে। ফলে কারো কারো কাছে জীবনের চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয়তর মনে হয়। সব প্রাপ্তি ম্লান হয়ে যায়। হয়তো ম্লানতাই ‘ফারহানা আক্তারে’র মতো স্বাবলম্বী, সাকসেসফুল নারীদেরও আত্মঘাতী করে তোলার নেপথ্য কারণ।

বরং নারীরা বীরদর্পে সমস্যার মোকাবিলা করে ইতিহাস সৃষ্টি করবে। শোক থেকে শক্তির প্রেরণা নেবে। যেই প্রেরণায় নারী আপন বিশ্ব গড়ে তুলবে নিজের কল্পনার রঙে। জাগুক নিখিল নারী৷

তবু জীবন- পরিবেশ- পরিস্থিতি বাস্তব। একে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনোই উপায় নেই। বুঝতে হবে, সমস্যাহীন পৃথিবী হয় না। সবার জীবনই সমস্যায় ভরা। হয়তো মানুষ ভেদে তার সমস্যাটা অন্যদের থেকে ভিন্ন। তবে সমস্যা থাকবেই। প্রকৃত অর্থে জীবনের প্রতিকূল পরিবেশ আসবেই সেই পরিস্থিতি সামাল না দিয়ে বরং এই আত্মঘাতী হওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? রাজধানীর ডেমরায় দরজা ভেঙে ফারহানা আক্তার শিল্পী নামের এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই নারী গাইনি চিকিৎসক। পুলিশি সূত্রে জানা যায়, স্বামী এবং একছেলে মগবাজারে আলাদা বাসায় থাকেন। তার বাসায় তিনি একাই থাকতেন।

ঘটনা পরম্পরায় কিছু বিষয় স্পষ্ট। দাম্পত্য সম্পর্কের ফাটল হয়তো দুটি মানুষকে আলাদা অবস্থানে রাখতে বাধ্য করেছে। তবে এই বিষয়কে ঘিরে নারীদের জীবনে পরিপার্শ্বের চাপ সৃষ্টি বেশি পরিলক্ষিত হয়। সমাজ নারীর একা অবস্থান করা ভালোভাবে গ্রহণ করে না। বৃহত্তর সমাজের কথা বাদই দেওয়া যাক। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয়, পরিবার- পরিজনও নারীর একা বসবাসে সমর্থন জানান না। সমস্যা – সংকট সবকিছু ছাপিয়ে নারীকে মেনে নিতে হয় অন্যায়-অবিচার-প্রতিকূল পরিস্থিতি। ফলে এত সব যন্ত্রণা কারো কাছে খুব ভার মনে হয়। পৃথিবী থেকে পলায়ন করতে ইচ্ছে করে। যার ফলস্বরূপ ফারহানার মতো অসংখ্য নারীর আত্মঘাতীর ঘটনা!

আজও নারী কি আসলেই এত অসহায়। নারী কেন সব প্রতিকূলতার বুকে পদাঘাত করতে পারছে না? যেই সমাজ- পরিবার-পরিজন তার জীবনকে অতিষ্ট করছে, মনের শান্তি নষ্ট করছে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। তা না করে কেনোই বা নারী নিজে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে!

এই ভয়াবহ পথ বেছে নেওয়া বোকামি। বুঝতে হবে, জীবনের মূল্য অনেক। কারো বা কোনো একটি গোষ্ঠীর জন্য শত প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে যে পথ সৃষ্টি হয়েছে তা কোনভাবেই ধ্বংস করা উচিত নয়। কবে আমাদের সমাজের নারীদের চোখ খুলবে? কবে নারীরা সমস্যা দেখলে, অশান্তি সৃষ্টি হলেই পিছু হটবে না? বরং নারীরা বীরদর্পে সমস্যার মোকাবিলা করে ইতিহাস সৃষ্টি করবে। শোক থেকে শক্তির প্রেরণা নেবে। যেই প্রেরণায় নারী আপন বিশ্ব গড়ে তুলবে নিজের কল্পনার রঙে। জাগুক নিখিল নারী৷

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ