অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং নারীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি
প্রেগন্যান্সি নারী সত্তা প্রকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম। প্রতিটি নারীই মা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে। এই সময় একটি নারী যে রকম শারীরিক ও মানসিক ওঠানামার মধ্যে দিয়ে যায়, তা সেই নারী ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারে না।
সন্তান জন্মের পর তার মুখ দেখলেই সমস্ত কষ্টের অনুভূতি বিলীন হয়ে যায়। সন্তান জন্মের পর তাকে রাত জেগে যত্ন নিতে হয়। ঘুমের সিডিউল ঠিক থাকে না। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিনের দরকার হয়, যাতে সন্তানটি ঠিকমতো বুকের দুধ পান করতে পারে। নিজের যত্ন নেওয়ার সময় থাকে না। পরিবারের মানুষজন তাকে সাপোর্ট করে, কখনো একাই সন্তান সামাল দিতে হয়।
৬ মাস পর্যন্ত একটি শিশুকে শুধু বুকের দুধ পান করার মধ্যে দিয়ে তাকেও খাবার খেতে হয় বেশি পরিমাণে। তখন তার শরীরটি মোটা হয়ে যায়। পুরুষদের এই সময়টাতে অধিক কেয়ারিং হওয়া দরকার। কিন্তু তখন এদেশের বেশিরভাগ পুরুষের মধ্যে থাকে উদাসীনতা। কারণ সন্তানের জন্য মাকে অধিক সময় ব্যয় করতে হয়।
নারীর প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস আর শেষ তিন মাস অধিকহারে যত্নশীল হতে হয়। কারণ এই সময়টি শঙ্কাজনক। স্বামীদের শারীরিক চাহিদা এই সময় ঠিকমতো পূরণ হয় না। তখন কিছু স্বামী অন্য নারীর দিকে ঝুঁকে পড়ে। অথচ স্বামীর ভূমিকা হওয়া উচিত স্ত্রীর পাশে থেকে তাকে মানসিক শান্তি দিয়ে যাওয়া। ঘটনা ঘটে তার উল্টো।
একটি সন্তান জন্মের পর স্বামী-স্ত্রীর অরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের কারণে নারীটি পুনরায় গর্ভবতী হয়ে পড়তে পারে। যা তাদের পরিকল্পনা মাফিক হয় না। এটাকেই বলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে ইমাজেন্সি কনট্রাসেপটিভ পিল ৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রহণ করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি পিল গ্রহণ করবেন, তত তাড়াতাড়ি গর্ভনিরোধের কাজ শুরু করবে। তারপরও যদি গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, যদি আপনি সন্তানটি না চান। সন্তানের বয়স কম থাকায় অনেকেই সন্তানটির পৃথিবীতে আসা রোধ করে দেয়।
কিছু সেলিব্রেটি আছেন, যেমন শাকিব আল হাসান, তাদের পরপর দুটি কন্যা সন্তানের পর তৃতীয় বারের মতো শিশির দ্বিতীয় সন্তানের বয়স ১০ মাসের মাথায় আবার গর্ভবতী হয়ে পড়েন। একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। আরেক দিকে ভারতের খ্যাতিমান হিন্দি ছবির নায়িকা আলিয়া ভাঁট প্রথম সন্তান জন্মের মাত্র ৩ মাস পর আবারও গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তারা মনে করছেন, একবারে দুটি বাচ্চা মানুষ হয়ে গেলে সিনেমায় যোগ দেওয়া সহজ হবে। একেকজনের জীবনে হয়তো একেকটা কারণ থাকে সন্তান জন্মের জন্য। তাই সেই সময়টাতে নিরাপদ শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাহলে ঝুঁকি থাকবে না।
নারীর শরীর তখন কোনোভাবেই তৈরী থাকেনা আরেকটি সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য। প্রথম সন্তানের জন্য অধিকহারে যত্নশীলতা দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উচ্চবিত্ত পরিবারে কেয়ারটেকার দিয়ে সন্তান লালন পালন করে। কিন্ত একটি মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারে যখন নারীটি অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ করে তখন তাকে সাহায্য করার জন্য কেউ থাকেনা। তাই স্বামীকে অধিক যত্নশীল হতে হবে। নারীটির সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।
একটুখানি অসতর্কতায় অনাকাঙ্ক্ষিভাবে নারীর গর্ভে মানবভ্রূণ সৃষ্টি হয়। অপরিকল্পিত গর্ভধারণের কারণে অনেক নারীই গর্ভপাতের পথ বেচে নেন। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত করতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যবরণ করেন। সারা বিশ্বেই বাড়ছে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ। সেই সঙ্গে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে গর্ভপাতও। এই অস্বস্তিকর-অমানবিক নির্মমমতার যজ্ঞে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। কখনো সমাজ ও পরিবারে দুর্নাম থেকে বাঁচতে, কখনো পরিবারকে ছোট রাখতে নারীরা গর্ভপাতের পথ বেছে নেন। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাত ঠেকাতে হলে নারীকেই সচেতন হতে হবে। সঙ্গে পরিবারের সদস্য বিশেষ করে জীবনসঙ্গীকেও হতে হবে যত্নশীল।