Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রুবিনার মৃত্যু প্রমাণ দিলো উচ্চশিক্ষিত হলেই মানুষ হয় না

রুবিনা আক্তার শুধু একজন নারী নন, তিনি পুরো বাংলাদেশের স্থিরচিত্র। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষকের গাড়ির নিচে যখন একজন নারী নিহত হন, তখন এরচেয়ে ভালো কিছু বলা যায় না। আরও অবাক হতে হয় যখন আমরা শুনতে পাই ঘটনা ঘটেছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ই। রুবিনা আক্তারের স্বামী একবছর আগে মারা গেছেন। গত ২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে ঘটনাটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি জনগণের নজরে আসে। আমরা কতটা অসহায় হলে বাংলাদেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে দেখি।

ঘটনার সূত্রপাত ঘটে চারুকলা অনুষদের সামনে। রুবিনা আক্তার দেবর নুরুল আমিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে তার নিজের বাসা হাজারীবাগে যাচ্ছিলেন। চারুকলা অনুষদের বিপরীতে একটা গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগলে রুবিনা আক্তার পড়ে যান। অভিযুক্ত চালকের গাড়ির নিচে আটকে যান। চালক গাড়ি থামানোর পরিবর্তে আরও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। পথচারীরা চালককে থামানোর চেষ্টা করলে একপর্যায়ে নীলক্ষেতের গণতন্ত্র ও মুক্তি তোরণের সামনে গাড়িটি থামতে বাধ্য হয়। আশেপাশে থাকা জনগণ গণপিটুনি দেন চালককে। এসময় তারা জানতে পারেন, চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষক। শেষে দুজনকেই ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করায় উত্তেজিত জনতা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রুবিনা আক্তার।

আমাদের দেশে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে অনেক আন্দোলন হয়েছে ইতোমধ্যে। আমরা আসলে কতটা নিরাপদ সড়ক পেয়েছি সেটাই ভাবনার বিষয়। পত্রিকা খুললেই দেখতে পাই, যেখানে-সেখানে গাড়ির নিচে পড়ে মৃত্যুবরণ করছে মানুষ। প্রায় সময় দেখি, গাড়ির অবস্থা খারাপ থাকার কারণে বা অসতর্ক চালকের জন্য বেশিরভাগ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। পড়াশোনা কম জানা চালক অনেকাংশে জড়িত থাকে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া নারীর মৃত্যুর অজুহাত কোনোভাবেই উল্লিখিত বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষকের কাছে যদি মানবতার ন্যূনতম ছিটেফোঁটা দেখতে না পাই, তাহলে আদতে আমরা কী শিখছি আর কী শিক্ষা দিচ্ছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে?

আমরা দেখতে পেলাম, একজন রুবিনা আক্তারের এই হত্যাকাণ্ড প্রমাণ দিয়ে গেলো কেউ সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই মানুষ হয় না। তার ভেতর মনুষ্যত্ব জাগে না। বর্বর চিরকাল বর্বরই থাকে, তার শিক্ষা তাকে মানুষ করতে পারে না। কেবল কতিপয় সনদের মালিক করে। এর বেশি কিছু না।

ধরেই নেওয়া যায় যে তিনি হঠাৎ এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়েছেন এবং পালাতে চেয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিজেকে সামলে ঠিকই গাড়ি থেকে বের হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতেন। একজন নারীকে চারুকলার সামনে থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত। কতটা অমানবিক হলে একজন মানুষ এমনটা করতে পারে? মানবতা আজ কোথায় হারিয়ে গেলো!

শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। আর আমরা দেশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের শিক্ষকের কাছে এমন আচরণ দেখতে পেলাম! আমরা দেখতে পেলাম, একজন রুবিনা আক্তারের এই হত্যাকাণ্ড প্রমাণ দিয়ে গেলো কেউ সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই মানুষ হয় না। তার ভেতর মনুষ্যত্ব জাগে না। বর্বর চিরকাল বর্বরই থাকে, তার শিক্ষা তাকে মানুষ করতে পারে না। কেবল কতিপয় সনদের মালিক করে। এর বেশি কিছু না।

যারা পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়, প্রকৃতপক্ষে তারা মরে গিয়ে বেঁচেই যায়। পরবর্তী লক্ষ্য থাকে অন্য একটি পরিবারের দিকে। কে কখন কোথায় কিভাবে নাই হয়ে যাবে কেউ বলতে পারে না। সেক্ষেত্রে ভয়টা রয়েই যায় আমাদের মতো ছাপোষা কিছু মানুষের। রুবিনা আক্তারের সন্তান বড় হওয়ার আগেই জানতে পারলো যে, তার মা দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তির গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়েছেন। অবশ্য এই ঘটনাও আমাদের গোচরে বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। নতুন নানান মজাদার খবরের ভিড়ে এমন একটা মর্মান্তিক খবরও বেমালুম ভুলে যাবো। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন ও এটাই আমাদের জীবন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ