Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আয়ের দিক থেকে নারীরা কেন পিছিয়ে? 

নারী-পুরুষের বৈষম্যের শুরুটা হয় সেই জন্মলগ্ন থেকেই। সাধারণত ছেলেশিশুর জন্মের পর বাঁধভাঙা খুশির জোয়ার চলে আসে পরিবারে। কিন্তু কন্যাসন্তান জন্মের পর পরিবারের সদস্যদের মুখে পরে কালো মেঘের ছায়া। এরপর জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা মেলে বৈষম্যের। এমনকি আয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈষম্য। কর্মক্ষেত্রে নারীকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয় প্রায়ই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সমান মেধা, ডিগ্রি এবং কর্মক্ষেত্রে সমান অবদান রাখার পরও নারীরা আয়ের দিক থেকে কেন পিছিয়ে?  

 

1

 

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয় বৈষম্য হচ্ছে কর্মদাতার সৃষ্টি, আর কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বা নারীর জীবনযাত্রাটা এমন যে তার আয় বৈষম্যটা হয়েই যায়। পদোন্নতির দিকে চোখ রাখলে দেখতে পাবেন উপরের দিকে যতই চোখ পড়বে, নারীর সংখ্যা ততই কমতে থাকে। তবে নারী-পুরুষের এই আয়ের বৈষম্য আনুষ্ঠানিক খাতে অনেকটা কম হলেও অনানুষ্ঠানিক খাতে এই বৈষম্য অনেকটাই প্রকট। কারণ, আনুষ্ঠানিক খাতে মোটামুটি প্রতিটি পদের বিপরীতে বেতন নির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে। অন্য দিকে, অনানুষ্ঠানিক খাতে কার কত বেতন হবে, কাকে কত টাকা মজুরি দেয়া হবে, তা নির্ভর করে কর্মদাতার ওপর। তাই কর্মদাতাও সুযোগ পেয়ে যায় এ-খাতে বৈষম্য তৈরি করার। শ্রম-জরিপের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে নারীদের ৯২ শতাংশের কর্মসংস্থান এখনো অনানুষ্ঠানিক খাতে।

 

আয়ের দিক থেকে নারীরা কেন পিছিয়ে? 

 

নারী শ্রমিক যারা রাস্তার কাজ করছেন, ইট ভাঙছেন কিংবা রাস্তা-ঘাট নির্মাণের সাথে আছেন সে-সব জায়গায় নারী শ্রমিকরা ৩০-৪০% পর্যন্ত মজুরি কম পেয়ে থাকে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক ওয়েববিনারে ‘কৃষিতে নারীর কাজের মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে তুলে ধরা হয় কৃষিকাজে যুক্ত আছেন, এমন নারীদের মধ্যে মাত্র ১৫ ভাগের কাছাকাছি নারী মজুরি পান।

 

আয়ের দিক থেকে নারীরা কেন পিছিয়ে? 

আবার অনেক কর্মক্ষেত্রে ওভারটাইম করার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু ওভারটাইমে কাজের ক্ষেত্রে নারীর তুলনায় পুরুষই এগিয়ে কারণ নারীকে কাজ শেষে সামলাতে হয় ঘরের দায়িত্ব। আর আমাদের সমাজে যেখানে নারীর বাইরে বেরিয়ে কাজ করাকেই এক ধরনের অন্যায় মনে করা হয়, সেখানে কাজশেষে রাত করে ওভারটাইম করাটা মোটামুটি অসম্ভব। এই ওভারটাইমের কারণেই মোট আয়ের হিসাবে মেয়েরা পুরুষের তুলনায় পেছনে পড়ে যাচ্ছেন। 

 

আয়ের দিক থেকে নারীরা কেন পিছিয়ে? 

 

নারী-পুরুষের আয়-বৈষম্যের পেছনে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ এবং নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা এখনো অনেক ধরনের কাজের সুযোগ পান না। কারণ, প্রায় ক্ষেত্রেই কাজের জায়গায় নারীদের অনেক ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়, এবং সন্ধ্যার পরে নারীদের বাইরে থাকা যেন আমাদের সমাজে মহাঅপরাধ, আর একটা নির্দিষ্ট সময় পরে নারীদের পড়তে হয় বিভিন্ন অসুবিধায়। এ-কারণে অনেক ধরনের কাজের সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হন। সেটাও আয়-বৈষম্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। 

আরো একটি বড় প্রশ্ন আসে অফিসের ভেতরের নিরাপত্তা নিয়েও। রাস্তাঘাটে বখাটে ছেলেদের থেকে শুরু করে রিকশাচালক, বাসের হেল্পার সবার কাছ থেকে হয়রানির শিকার হওয়ার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষিত, বহুডিগ্রিধারী কলিগ বা বসের কাছেও হয়রানির শিকার হন নারীরা। এ হয়রানির জন্য অনেক নারী তার কর্মক্ষেত্র থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। এভাবেও তৈরি হয় আয়ের বৈষম্য। 

 

আয়ের দিক থেকে নারীরা কেন পিছিয়ে? 

 

উদ্দেশ্য বা কারণ যা-ই হোক না কেন, দেশে নারী-পুরুষের আয়ের বৈষম্য যে অনেকটাই প্রকট, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী, এমনকি সেনাবাহিনীর মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশাতেও নারী তার যোগ্যতার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছেন। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে যদি বিবেচনা করতে হয়, তবে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান করবে। কিন্তু তবু উন্নয়নশীল একটি দেশে নারী-পুরুষের আয়-বৈষম্য দেশের ভাবমূর্তিতে আঘাত তো আনে বটেই। 

 

আয়ের দিক থেকে নারীরা কেন পিছিয়ে? 

 

বর্তমানে আধুনিক এই সমাজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নারী-পুরুষের আয়-বৈষম্য দূর করা খুবই জরুরি। যদিও আধুনিক সমাজের প্রগতিশীল অনেকেই এই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছে, ভাঙার চেষ্টা করছে নারীর কর্মক্ষেত্রে যোগদানের পথের সব বাঁধা। কিন্তু পুরোপুরি সফল হওয়ার জন্য এখনো হয়তো-বা হাঁটতে হবে অনেক পথ।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ