সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের `উষ্ণতার ফ্রি হাট’
প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। বছরের এই সময়টাতে সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে 'মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন' আয়োজন করেছে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি 'উষ্ণতার ফ্রি হাট'। বুধবার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় রাজধানীর কাওরান বাজারে ইত্তেফাক ভবনের সামনে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
এ কর্মসূচির মাধ্যমে কাওরান বাজার অঞ্চলের ক্রয়সামর্থ্যহীন পরিবারের ২ শতাধিক শিশু-কিশোরের মাঝে লাল সবুজ রঙের নিজস্ব ডিজাইনের শীতের পোশাক, বেলুন, প্রকৃতি বান্ধব বর্ণমালা শিক্ষার বই ‘প্রকৃতির পাঠ' বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর স্মারক উপহার হিসেবে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা, দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক ‘অনন্যা'র সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বাবু।
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘সরকার ও রাজনৈতিক দলের বাইরে এই প্রথম মনে হয় কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ২০১৮ সাল থেকে এমন উদ্যোগ নিয়েছে। তাও আবার একজন প্রয়াত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার পুরো বছরের রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার অর্থে। তিনি আরও বলেন যতক্ষণ না মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম ভালোভাবে জানবে, ততক্ষণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন কঠিন হবে। মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পর বাংলাদেশটাকে নতুন প্রজন্ম আসলে কিভাবে দেখছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আজ পঞ্চাশ বছর পর মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। কেননা অনেকেই বলেছিল, বাংলাদেশ এক দশক পার করতে পারবে না। কিন্তু আমরা দেখেছি, জনগণ বাংলাদেশকে বুকের ভেতর লালন করে এই ৫৪ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে চলেছে।’
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে ৫০ বছর বেঁচে থাকা আমার জন্য বিশাল ব্যাপার। কারণ একাত্তরে হয়তো চলে যেতে পারতাম। সেখানে এই দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেও বেঁচে আছি। দেশকে ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের নানা রকম স্বপ্ন ছিল। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, আমাদের নিজেদের স্বপ্নের সোনার বাংলা তৈরি করা অনেক কারণে বিবর্ণ হয়ে গেছে। এই বিবর্ণতাকে কাটিয়ে ৫০ বছরে অনেক কিছু অর্জন হয়েছে।এরপরও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। এই সমস্যা যখনই হাতে হাত মিলিয়ে আবার সেই একাত্তরের মতো এগিয়ে আসবো। সবাই মিলে এগিয়ে এলেই আমরা দেশের উন্নতি করতে পারবো। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমন্ত্রিত দুই জন জীবন্ত কিংবদন্তীকে পুষ্পগুচ্ছ দিয়ে বরণ করা হয়। এসময় তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।
ময়মনসিংহের একজন প্রয়াত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, তার পুরো এক বছরের রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার অর্থে মাসব্যাপী এই কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলবে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর ও কক্সবাজারে।