Skip to content

১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আয়াতরা আর কত খুন হবে?

পাশবিকতার নগ্ন তাণ্ডব সর্বত্র। কিন্তু একটি ছোট্ট অবুঝ কন্যা শিশুর প্রতি এ কেমন আচরণ! জাতি হিসেবে আমরা দিনে দিনে যেন আরও গভীরে তলিয়ে যাচ্ছি। যেই শিশুরা পবিত্রতার প্রতীক তারাও ছাড় পাচ্ছে না সমাজের কিছু মানুষ সদৃশ জন্তুর কাছ থেকে। নারী আজন্ম পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নৃশংসতার শিকার। তবে কন্যা শিশু হোক বা কিশোরী, পরিণত নারী কেউই রক্ষা পাচ্ছে না।

ভাবতে বড় অবাক লাগে আমরা কোন সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি দিনে দিনে? যে সমাজে একজন ছোট্ট কন্যা শিশুও নিরাপদ নয়! স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করলেও মানসিক দৈন্য থেকে আমাদের পরিত্রাণ ঘটেনি আজও!

সাম্প্রতিককালে খুবই আলোচিত ঘটনা শিশু কন্যা আয়াতের হত্যা। পাশবিকতা কোন পর্যায়ে পৌঁছালে মাত্র ৪ বছর ৯ মাসের একটি কন্যা শিশুকে এভাবে হত্যা করা যায়? নিখোঁজের ১০ দিন পর চট্রগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে আলিনা ইসলাম আয়াতের খণ্ডিত ৬ টুকরো দেহ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার এলাকার আকমল আলী রোড থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আয়াতকে অপহরণ করে তাদের বাড়িভাড়া থাকা সাবেক ভাড়াটিয়ার পুত্র সন্তান আবির আলী। ১৫ নভেম্বর বিকেলে আয়াতকে অপহরণ এবং তৎপরবর্তীকালে তাকে হত্যা করে।

ছোট্ট কন্যা শিশুটিকে অপহরণের পর তার পক্ষ থেকে মুক্তিপণ দাবি করার মানসিকতা থাকলেও আয়াত চিৎকার করাকালীন তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মানুষরূপী পিশাচ। সমাজের এই বিভৎসতা দিনে দিনে সুস্থ সমাজকে নোংরা, কদর্য করে তুলতে আরও সহয়াক হচ্ছে! রাষ্ট্র কর্তৃক আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। মানুষের নগ্ন মানসিকতা প্রতিহত না করতে পারলে আয়াতদের এ সমাজে বেঁচে থাকা দায়।

অপরাধটি যিনি সংঘটিত করেছে তার বয়স মাত্র ১৯। আবির আলী একজন ১৯ বছরের তরুণ এবং গার্মেন্টস কর্মী। গত ৬ মাস যাবৎ সে বেকার৷ এই তরুণের অপরাধপ্রবণ মানসিকতা গড়ে ওঠার পেছনে কী সত্যি সমাজ দায়ী নয়? আমরা জানি, অলস মস্তিষ্ক বিপথে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি। এক্ষেত্রে আবির আলী নামধারী তরুণের বিভৎস মানসিকতা তার মানসিক দৈন্যের ফল। তরুণ সমাজের এভাবে বিপথগামী হওয়াকে রুখতে না পারলে সমাজে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি-গুম-খুন-হত্যা আদৌ কি প্রতিহত করা যাবে।

বর্তমান সময়ে বারবার নিউজভিডগুলোতে দেখা মিলছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোথাও তাদের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা ঠেকানো যাচ্ছে না। কিশোর- তরুণদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে এখনই সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্যোগী হতে হবে। মানসিক বিকৃতির বলি যেন কোন মায়ের সন্তানকে না হতে হয় সেলক্ষে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে। সমাজে আয়াতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই ছোট্ট কন্যাশিশুটি পৃথিবীর রূঢ়তা, কদর্যতা না বুঝলেও তাকে নৃশংসতার শিকার হতে হলো। এর দায় কার? শুধুই কী আবির আলী নামধারী ১৯ বছরের তরুণের? সমাজ, রাষ্ট্রের জবাব কী?

আমাদের সমাজে একের পর এক বিভৎসতা দেখতে দেখতে সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন মানুষেরাও মানসিকভাবে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এই সমাজের এরূপ চিত্র তো হওয়ার কথা নয়। আমরা চাই সমাজের মানুষ সুস্থ, মানবিক, রুচিশীল হোক কিন্তু বিপরীতে ঘটছে ঠিক উল্টো। এর দায় সমাজে-রাষ্ট্রের। যতদিন সমাজ-রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে পারবে না ততদিন মানুষের পশুবৃত্তি কমার সম্ভবনা কম! তবে পরিবার-সমাজে যদি সুস্থ মানসিকতার চর্চা হয়, জীবন কী, জীবনের ধর্ম কী তার সঠিকতা নিরূপণ করা যায় তবে সহিংসতা কমে আসবে আশাকরি। কন্যা শিশুর প্রতি এরূপ বিভৎসতা বন্ধ হোক। একটি সুস্থ-সুন্দর সমাজ গড়ে উঠুক। যে সমাজ সত্য, সুন্দর এবং কল্যাণের পথনির্দেশ করবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ