ড্রোনের সাহায্যে বৃষ্টিপাত!
"সাদা মেঘ আকাশ ঢেকে কেড়েছে বেলার গতি
রৌদ্রোজ্জ্বল দিনকে না হয় দিয়েছে ক্ষণিকের বিরতি"
প্রচণ্ড গরমে এক পশলা বৃষ্টির প্রতীক্ষায় যেন প্রহর গুনে পার হয় দিন। কিন্তু প্রকৃতির ইচ্ছের বাইরে তো বৃষ্টির দেখা মেলা সম্ভব না। তবে যখন প্রয়োজনের খাতিরে বিজ্ঞানের সাহায্য নেয়া যায় সেখানে আর বাধা কিসের? মেঘের মধ্যে থাকা স্থির চার্জিত কণাগুলোর সঙ্গে পানির ঘনত্ব ও বৃষ্টিপাতের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ লেজার রশ্মি দিয়ে এই কণা উদ্দীপ্ত করা হলে বৃষ্টি নামানো সম্ভব। তবে এবার এই পদ্ধতির বাইরে গিয়ে ড্রোনের সাহায্যে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি হবে।
কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি নামানোর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই কাজে ব্যবহার হবে বিশেষ ড্রোন। এই ড্রোন উড়ে যাবে মেঘগুচ্ছের কাছে। আর সেখানে বৈদ্যুতিক শক কিংবা তাপ দেয়া হবে। ফলে মেঘমালা গলে ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টির সৃষ্টি হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। যেখানে বছরে সাধারণত ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সার্বিক বিবেচনায় দেখা যায় দেশটিতে প্রয়োজনের তুলনায় এটি খুবই কম। এজন্য তারা ২০১৭ সালে ১৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে কয়েকটি বৃষ্টিবর্ধন প্রকল্পের কাজ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
এর মধ্যে একটি প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের রিডিং ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী। প্রকল্পটির লক্ষ্য হচ্ছে, মেঘের ফোঁটাগুলোতে বৈদ্যুতিক তাপের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করা।
বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে উৎক্ষেপণযোগ্য চারটি ড্রোন তৈরি করেছে। প্রতিটি ড্রোনের থাকবে দুই মিটারের পাখা। ক্যাটাপুল্ট নামের এক ধরনের ব্যালিস্টিক ডিভাইস থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে ড্রোনগুলোকে। অটোপাইলট সিস্টেস সংবলিত এই ড্রোনগুলো আকাশে উড়তে পারবে ৪০ মিনিট ধরে।
ড্রোনে থাকা সেন্সর তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপ করতে পারবে। এরই মধ্যে পরীক্ষা চালানো হয়েছে যুক্তরাজ্যে ও ফিনল্যান্ডে। এ সংক্রান্ত গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব অ্যাটমোসফেরিক অ্যান্ড ওশান টেকনোলজিতে।
আমিরাতের বৃষ্টি বর্ধন বিজ্ঞান গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক জানান, বৈদ্যুতিক চার্জ নির্গমন যন্ত্র ও কাস্টমাইজড সেন্সর সজ্জিত ড্রোন তুলনামূলক কম উচ্চতায় মেঘের কাছে উড়ে যাবে এবং উত্তাপ সৃষ্টির মাধ্যমে গলিয়ে ফেলবে ও বৃষ্টিপাত ঘটাবে।
আগে যেখানে আকাশে উড়তে চাওয়াই ছিল কল্পনার বাইরে সেখানে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামানো যেন বিজ্ঞানের এক নতুন উদ্ভাবনী শক্তির প্রমাণ । মানব সভ্যতা বর্তমানে উন্নতির শিখরগামী। তবে বেশিরভাগটাই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে। প্রযুক্তি মানুষের কাছে উন্মোচিত করেছে অচেনা এক আকর্ষণীয় জগতের সিংহদরজা।