শ্রমজীবী নারীরা কর্মক্ষেত্র হোক সম্মানের
প্রতিবছর নারী দিবস এলেই প্রচারনায় দেখা যায় সফল নারীদের সাফল্যগাথা। পত্র-পত্রিকা, টিভির বিজ্ঞাপনে নারীই থাকে প্রতিপাদ্য। নারী দিবসে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। উপস্থিত থাকেন অনেক সফল নারী। তবে, ফেলে আসা দিনের মতোই আড়ালে পড়েই থাকেন নারী পোশাক শ্রমিকরা। ঐতিহাসিক এই দিনের প্রচলনকারীদেরই বাদ দেওয়া হয় এই দিনের তাৎপর্য থেকে। আমাদের দেশের নারী পোশাক শ্রমিকদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ও সংগ্রামের হিসাবই বা কষেছেন ক’জন?
নারীর অগ্রগতি অথবা কর্মক্ষেত্রে নারীর মর্যাদার কথা উঠলে সবাই স্মরণ করি উচ্চপদে কাজ করা নারীদের। যেমন- ব্যাংকে কর্মরত নারী, শিক্ষক, পুলিশ, নৌবাহিনীতে কর্মরত নারী, রাজনীতিবিদ, বিচারক, আমলাদের কথাই বলি। কিন্তু, শ্রমজীবী নারী, যারা দিনমজুরের কাজ করেন অথবা পোষাক কারখানায় কাজ করেন, তাদের অধিকারের জন্য আমরা কতটুকু আওয়াজ তুলি?
বাংলাদেশের নারী পোশাক শ্রমিকরা এদেশের অর্থনীতি বিকাশে নিজেদের জীবন-জীবিকা-প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছেন প্রতিদিন। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ পোশাকে সেলাই করে পশ্চিমের বাজারে পৌঁছানোর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারাও হয়েছেন গ্লোবালাইজেশনের অংশ। কিন্তু, ঘরে-বাইরের দ্বৈত বোঝা বয়ে বেড়ায় নারী। সমাজ কতটুকু মূল্যায়ন করে তাদের শ্রমের?
নারী উন্নয়নের এই সময়ে শ্রমজীবী নারী অনেকটাই পিছিয়ে। দিনের ১২ ঘণ্টা কাজ করেও তারা পায় না ন্যায্যমূল্য। কর্মক্ষেত্রে তাদের বরাবরই অবমূল্যায়ন করা হয়। কর্মক্ষেত্রে তারা হেনস্তার শিকারও হন।
বাংলাদেশের তৈরি পোষাক কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের শতকরা প্রায় ১৩ ভাগ যৌন হয়রানির শিকার। শারীরিক নির্যাতনের শিকার ২০ ভাগ। মানসিক নির্যাতনের শিকার ৭১ ভাগেরও বেশি। আর এই নির্যাতনের শিকার ৩২ ভাগই জানেন না, এর বিরুদ্ধে কোথায় অভিযোগ করতে হবে। এছাড়া, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি কাজ করানো হয়।
পোষাক শিল্প খাতের মূল চালিকাশক্তি নারী কর্মী। কিন্তু, এই নারী কর্মীরাই হন নির্যাতনের শিকার। কর্মক্ষেত্রই তাদের প্রতিকূলে। এছাড়া, কর্মক্ষেত্রের প্রভাব তাদের ব্যক্তিজীবনেও পড়ে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন না তারা।
অথচ আমরা মুদ্রার একপিঠ নিয়েই বিচার করি। অন্য পাশের কথা ভুলে যাই। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় এই শ্রমজীবী নারীদেরও শামিল করতে হবে। তাদের প্রাপ্যটুকু দেওয়ার লড়াই আমাদেরও। কেবল দুমুঠো ভাত আর কাপড়ই নয়, নারী চায় তার যথাযোগ্য সম্মান-মর্যাদা। যতদিন না এই শ্রমজীবী নারীদের প্রাপ্য না দেওয়া হবে, ততদিন নারীর অগ্রযাত্রা পরিপূর্ণ হবে না।